জেলবন্দি পাকিস্তানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরে চাপা উত্তেজনার মধ্যেই আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা—এমন অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
বুধবার দলটি তাদের প্রতিষ্ঠাতাকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করে এই প্রচেষ্টাকে ঘৃণিত ক্যাম্পেইন বলে আখ্যায়িত করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
পিটিআইর মুখপাত্র শেখ ওয়াকাস আকরাম পিএমএল-এন নেত্রী আজমা বুখারিকে দায়ী করে বলেন, ‘রাজপ্রাসাদ-সমর্থিত এক চক্রান্ত চলছে, যার লক্ষ্য পিটিআইকে ভেতর থেকেই ভেঙে ফেলা।’
এদিকে খাইবার পাখতুনখাওয়া’র মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্ডাপুর সরাসরি ‘গভর্নর শাসন’ জারি করার ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এই পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের নেতাকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
আজমা বুখারি পাল্টা দাবি করে বলেন, ‘ইমরান খানকে তাঁর নিজের বোন এবং দলের সদস্যরাই কোণঠাসা করে ফেলেছেন। ভাগ্যের নির্মমতা দেখুন—যিনি নওয়াজ শরিফকে বাদ দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন, তিনিই আজ ঘর ও দলে নিজেই উপেক্ষিত।’
তিনি দাবি করেন, ইমরানের বোন আলিমা খান ধারাবাহিকভাবে গান্ডাপুরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন এবং নিজেই স্বীকার করেছেন তার বিরুদ্ধে নানা চাল চলছে। তিনি বলেন, ‘যদি আলী আমিন সময়মতো প্রাদেশিক বাজেট পাস না করাতে পারতেন, তাহলে তাঁকে সংবিধান অনুযায়ী পদত্যাগ করতে হতো।’
আজমা আরও অভিযোগ করেন, ‘আলিমা খান গোষ্ঠী ও পিটিআইর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিম সরাসরি গান্ডাপুরের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে।’
তিনি জানান, বর্তমানে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পিটিআই তিন ভাগে বিভক্ত, এবং খাইবার পাখতুনখাওয়াতেও রয়েছে তিনটি পৃথক গোষ্ঠী—একটি জুনায়েদ আকবরের নেতৃত্বে, একটি আতিফ খানের অধীনে, আর একটি ‘বিদ্রোহী সদস্যদের’ নিয়ে গঠিত।
আজমা বলেন, ‘গত ১২ বছর ধরে খাইবার পাখতুনখাওয়া দুর্নীতিগ্রস্ত ও অযোগ্য রাজনীতিকদের দখলে। এর বিপরীতে, পাঞ্জাব এখন যোগ্যতা, সুশাসন ও স্বচ্ছতার আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’
বুখারির এই মন্তব্যের জবাবে পিটিআই দাবি করে, পুরো শাসক জোটই ‘মাইনাস ইমরান’ পরিকল্পনায় মোহিত এবং নিজেদেরই হাস্যকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় গান্ডাপুর বলেন, ‘পেছন থেকে এক ষড়যন্ত্র চলছে—খাইবার পাখতুনখাওয়াতে আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি করে পিটিআই সরকার দখলের প্রচেষ্টা চলছে। বাজেট প্রক্রিয়া থেকে ইমরান খানকে বাদ দেওয়ার মধ্যেই এ চক্রান্তের আভাস রয়েছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইমরান খান পিটিআইর মূল ভিত্তি—তাঁর চেয়ে উচ্চস্থানে কেউ নেই। যদি তিনি বলেন, আমি সরকার ছেড়ে দেব, তবে এক মিনিটেই সেটা করব। এই সরকার তাঁরই।’
গান্ডাপুর অভিযোগ করেন, ইমরান খানের কারাবন্দিত্বকে কাজে লাগিয়ে কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে দলকে ব্যবহার করছে। ‘যেদিন ইমরান মুক্ত হবেন, সেই দিন এসব স্বার্থান্বেষীরা উন্মোচিত হবে। জনগণই বিচার করবে কারা তাঁকে দুর্বল করতে চেয়েছে।’
তিনি জানান, দলীয় বৈঠক ও পরামর্শে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ‘‘সরকার দখলের ষড়যন্ত্র চলছিল, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে,’ তিনি বলেন।
বাজেট নিয়ে গান্ডাপুর বলেন, ‘এটাই সেরা বাজেট… আমাদের শুধু ইমরানকে জানাতে হয়েছিল। আমরা সরকারে আছি, চাইলে যে কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব। প্রতিষ্ঠাতা যেভাবে বলবেন, আমরা সেভাবেই সংশোধন করব।’
তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী না জানার ভান করলেও পেছনে একটি পরিকল্পনা হচ্ছে—আর্থিক জরুরি অবস্থা, গভর্নর শাসন এবং প্রাদেশিক সরকার দখলের চেষ্টা চলছে।
একই সঙ্গে, পিটিআইর মুখপাত্র শেখ ওয়াকাস এক বিবৃতিতে আজমা বুখারিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘ইমরান খানকে বাদ দেওয়ার উদগ্র প্রয়াসে পুরো রাজকীয় দরবার এখন অপমানিত ও উন্মোচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই জোট সংবিধান, আইন, বিচার, গণতন্ত্র, মূল্যবোধ এমনকি মানবতাকেও কবর দিয়েছে।’
ওয়াকাস বলেন, ‘আল্লাহর কৃপায় ইমরান খান ‘মাইনাস’ হননি, বরং জনগণ তাঁকে ‘মাল্টিপ্লাই’ করে দিয়েছে—এখন তিনি অন্য সবার ঊর্ধ্বে।’
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার-সমর্থিত বাহিনী ধারাবাহিকভাবে পিটিআইকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে। ‘হতাশ ও পরাজিত ক্রীড়ানকরা এখন নিজেদের লজ্জা ঢাকতে বিভাজন ও ষড়যন্ত্রের গল্প ছড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গত তিন বছরে সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষাকারী দল হিসেবে পিটিআইকে ভাঙার সব চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। ইমরান শুধু পিটিআইর নেতা নন, তিনি জাতির নেতা। ষড়যন্ত্র আর অপচেষ্টার মধ্যেও তিনিই পাকিস্তানের আশা।’
শেষে তিনি বলেন, ‘যেভাবে আগেও ঐক্যবদ্ধভাবে ঝড় পেরিয়েছি, এবারও পার করব। শাসক গোষ্ঠীর দাস-দাসীরা আবারও নির্ঘুম রাত কাটাবে।’
পাঞ্জাবের শাসনব্যবস্থার দুর্নীতিরও তীব্র সমালোচনা করে ওয়াকাস বলেন, ‘পাঞ্জাবের এই ম্যান্ডেট-চোররা এখন ১ ট্রিলিয়ন রুপির দুর্নীতির কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছে।’
আজমা বুখারিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘এই ম্যান্ডেট-চোরদের অন্ধ মুখপাত্র হিসেবে অপ্রকৃতিস্থ প্রচারণা চালানোর বদলে জনগণকে বলা উচিত, কীভাবে ‘পানামা কুইন’-এর নেতৃত্বে তাদের সম্পদ লুট হচ্ছে।’
এফপি/এসএন