বলিউডে ‘হিট’ শব্দের সংজ্ঞা আজ আর আগের মতো নেই। এখন আর কেবল লাভ করলেই সিনেমা সফল বলে গণ্য হয় না, বরং ছবির নামের পাশে থাকা তারকার নামটাই হয়ে উঠেছে সাফল্যের মানদণ্ড। আর সেই তারকার নাম যদি হয় ‘খান’, তাহলে হিসাবের খাতা বদলে যায় পুরোপুরি।
সম্প্রতি আমির খানের নতুন ছবি ‘সিতারে জমিন পার’ এই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। মুক্তির প্রথম ছয় দিনে প্রায় ৮০ কোটি রুপির ব্যবসা করলেও, সম্ভাব্য আয় যেখানে ১৫০ থেকে ১৬০ কোটির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, সেখানে ছবিটিকে কেউ কেউ ফ্লপ বলছেন। অথচ এত আয় একটি ‘ড্রামা’ ঘরানার ছবির জন্য মোটেই মন্দ নয়।
তবুও বলিউডের একাংশ ও কিছু ট্রেড আউটলেট একে ‘ব্লকবাস্টার’ আখ্যা দিচ্ছে, আবার কেউ বলছেন এটি ‘আন্ডারপারফর্মার’। এ দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছে তারকা-ভিত্তিক মানদণ্ড। ট্রেড অ্যানালিস্ট সুমিত কাদেল জানিয়েছেন, শাহরুখ খানের ছবি না কি অন্তত ২৫০ কোটি রুপি না তুললে তাকে হিট বলা যায় না। সালমানের জন্য সেই সীমা ২২৫ কোটি, আমির, হৃতিক ও রণবীরের জন্য ২০০ কোটি, আর অক্ষয় কুমারের জন্য ১৫০ কোটি রুপি।
এই হিসাবের কারণে এক সময়ের সফলতার প্রতীক ১৫০ কোটির আয়ও এখন ফেল করা ছবি বলে বিবেচিত হচ্ছে। শাহরুখের সাম্প্রতিক ছবি ‘ডানকি’ তার বড় প্রমাণ। প্রায় ২১০ কোটি আয় করলেও, শুধুমাত্র প্রত্যাশার তুলনায় আয় কম হওয়ায় ছবিটিকে “আশানুরূপ নয়” বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অথচ ছবিটি দর্শকদের মন জয় করেছিল।
এই অপটিক্স বা দেখনদারি নির্ভরতা চলচ্চিত্রশিল্পে এক ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। মধ্যম মানের ছবিগুলো ‘ফ্লপ’ তকমা পাচ্ছে, আর গড়পড়তা ছবিগুলোকে বলা হচ্ছে ‘মেগা হিট’। সিনেমার বাস্তবতা, বাজেট, জনরা বা দর্শকের প্রতিক্রিয়া সবকিছুকেই ছাপিয়ে যাচ্ছে তারকার নাম ও বাজারে তৈরি করা চিত্র।
এর ফলে ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হচ্ছে ভুল ব্যর্থতার ছবি, বক্স অফিসে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের বিভ্রান্তিকর হাইপ, আর মেধা ও প্রাসঙ্গিকতার চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে কেবল জনপ্রিয়তা।
চলচ্চিত্র তার ভারসাম্য হারাচ্ছে, আর এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই দরকার নতুন সংজ্ঞা - যেখানে ১৫০ কোটি আয় করা একটি ছবি, কেবলমাত্র তারকাভিত্তিক প্রত্যাশা পূরণ না করায় ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে না। এখন সময় এসেছে তারকার ইমেজ নয়, বরং সিনেমার অন্তর্নিহিত মানকেই ‘সাফল্যের আসল মানদণ্ড’ হিসেবে বিবেচনা করার।
কেএন/টিকে