জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আইনি লড়াইয়ের জন্য এক মাস সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল শুক্রবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, যা ভবিষ্যতের যেকোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্যও এক বড় জয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই রায়ের মাধ্যমে নিম্ন আদালতগুলোর নির্বাহী আদেশ ঠেকানোর ক্ষমতা সীমিত হয়ে গেছে, প্রেসিডেন্টদের নির্বাহী আদেশে বিচার বিভাগ যেভাবে হস্তক্ষেপ করে আসছিল, তার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলো। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিতকরণের নীতিকে এগিয়ে নেওয়ার পথ সুগম করল।

অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্বপ্রাপ্তির যে অধিকার শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলমান নীতি ছিল, সেটি এখন পরিবর্তনের পথে।

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এই রায়কে ‘এক বিশাল ও গৌরবময় জয়’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক নীতি রয়েছে, যেগুলো এখন আমরা নির্ভয়ে বাস্তবায়ন করতে পারব। আমি একটি বিশাল তালিকা প্রস্তুত রেখেছি।'

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ওই আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সব শিশুর জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ১৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত এই অধিকারকে এখন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা হয়েছে।

এই আদেশের বিরুদ্ধে একাধিক রাজ্যে মামলা দায়ের করা হয় এবং ফেডারেল বিচারকরা দেশব্যাপী এই আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত রাখেন।

তবে গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ক আদেশে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষেই অবস্থান নেয়। যদিও সংবিধান অনুযায়ী আদেশটির বৈধতা নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়নি, আদালত দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞাগুলো বাতিল করে দিয়েছে – ফলে কিছু রাজ্যে এই আদেশ কার্যকর হওয়ার পথ খুলে গেছে।

কোন রাজ্যে আদেশ কার্যকর, কোথায় নয়?

বর্তমানে ২২টি রাজ্য (যেমন- ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক, মেরিল্যান্ড, উত্তর ক্যারোলাইনা, অ্যারিজোনা, ওয়াশিংটন) এই আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করছে। এসব রাজ্যে আদেশ কার্যকর হচ্ছে না। কিন্তু অন্য ২৮টি রাজ্যে– যেমন টেক্সাস, মিসিসিপি, আরকানসাস, নর্থ ডাকোটা – আদেশটি কার্যকর হতে যাচ্ছে।

তবে সুপ্রিম কোর্ট এক মাসের সময় বেঁধে দিয়েছে, যার মধ্যে নতুন আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

নতুন আইনি চ্যালেঞ্জ কিভাবে আসতে পারে?

আদালত স্পষ্ট করেছে, একক ফেডারেল বিচারক আর দেশজুড়ে নির্বাহী আদেশ স্থগিত রাখতে পারবেন না, তবে আইনি লড়াইয়ের বিকল্প পথ খোলা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্লাস-অ্যাকশন মামলা, যেখানে একদল ব্যক্তি একই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে সম্মিলিতভাবে মামলা করেন।

ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি পক্ষ ক্লাস-অ্যাকশন মামলা দায়ের করতে শুরু করেছে। অ্যাকলু এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন দ্রুত নতুন মামলা করেছে, যেখানে যুক্ত করা হয়েছে সব গর্ভবতী নারী এবং যারা বৈধ আবাসনের কাগজপত্র ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন তাদের সন্তানদের।

ডেমোক্রেসি ডিফেন্ডার্স ফান্ডের আইনি পরিচালক টিয়ানা মেইস বলেন, ‘সংবিধান জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের গ্যারান্টি দেয়। কোনো প্রক্রিয়াগত রায়
আমাদের এই অধিকারের জন্য লড়াই করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রে ‘রাষ্ট্রহীন’ শিশুর জন্ম হবে কি?

যেসব রাজ্যে এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়নি, সেখানে যদি ট্রাম্পের আদেশ কার্যকর হয়, তাহলে অবৈধ অভিবাসী বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে পিতৃ-মাতৃ সূত্রে তাদের আদি দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব হতে পারে– যেমন : মেক্সিকো, ব্রাজিল ও পোল্যান্ড। তবে যেসব দেশে পিতার মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়া হয় না, সেসব শিশু রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়তে পারে। এই শিশুদের পাসপোর্ট, স্বাস্থ্যসেবা বা সামাজিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগও থাকবে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তবে অনেক আইন বিশেষজ্ঞের মতে, শিশুরা স্বতন্ত্রভাবে নয়, বরং পিতা-মাতার অভিবাসন মর্যাদার ভিত্তিতেই দেশের মধ্যে থাকার অধিকার পাবে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রফেসর ক্রিস্টিনা রদ্রিগেজ বলেন, ‘সরকার শুধু শিশুদের আলাদাভাবে বহিষ্কার করবে না। পিতা-মাতার অবস্থার ওপর নির্ভর করেই পুরো পরিবারকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।’

অস্থায়ী ভিসায় থাকা পিতা-মাতার সন্তানদের কী হবে?

যারা এইচ-১বির মতো অস্থায়ী কর্মভিত্তিক বা স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাদের সন্তানরাও নাগরিকত্ব পাবেন না ট্রাম্পের আদেশ অনুযায়ী।

তারা হয়তো পিতা-মাতার ভিসা স্ট্যাটাস অনুসরণ করে অস্থায়ী অভিবাসী হিসেবে গণ্য হতে পারে, তবে নাগরিকত্ব না পাওয়ায় তাদের সরকারি সেবা পাওয়া কঠিন হবে। যদি ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্ট এই আদেশকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে, তাহলে এই সময়কালে জন্ম নেওয়া হাজার হাজার শিশুকে পরে নাগরিকত্ব দিতে হতে পারে। তবে এর জন্য একটি জটিল প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হবে এবং তত দিনে অনেক পরিবার হয়তো বহিষ্কৃত হয়ে যাবে বা শিশুরা গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।

করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন বিশারদ স্টিফেন ইয়েল-লোহার বলেন, ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের বাস্তব সমস্যাগুলো বিশাল এবং পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন।’

সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস 

এমআর/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জামায়াতের যুব নেতার বিএনপিতে যোগদান Jun 28, 2025
img
বিএনপিতে নতুন সদস্য বাড়াতে হবে : মিন্টু Jun 28, 2025
img
‘গোরখোদক’ মনু মিয়ার মৃত্যুতে শোক জানালেন খায়রুল বাসার Jun 28, 2025
img
পাকিস্তানে প্রবল বন্যায় নিহত ২৫, নিখোঁজ ১৭ Jun 28, 2025
ক্ষুদে সাংবাদিকের মুখোমুখি বিসিবি সভাপতি, বিরাট কোহলির সাথে জার্সি বদল করতে চান Jun 28, 2025
‘আমার সাবিলা নূরকে ভালো লাগে, তাসনিয়া ফারিণকে ভালো লাগে না’ Jun 28, 2025
তুফান বেস্ট, তুফান টু আগে আসুক’ Jun 28, 2025
img
প্রাক্তন প্রেমিক-প্রেমিকা শেফালী ও সিদ্ধার্থের একইভাবে মৃত্যু Jun 28, 2025
টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়লেন নাজমুল হোসেন শান্ত Jun 28, 2025
img
বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে ক্ষমার সুযোগ নেই: মান্না Jun 28, 2025
আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতা, ইনিংস ব্যবধানে লঙ্কানদের কাছে বিধ্বস্ত শান্তরা! Jun 28, 2025
বুয়েটের তৈরি ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবেঃ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ Jun 28, 2025
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছাড়লেন উমামা ফাতেমা Jun 28, 2025
img
নিরাপত্তারক্ষীর দেওয়া তথ্যে শেফালির মৃত্যুতে রহস্য বেড়েছে! Jun 28, 2025
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ওপর চাঁদাবাজির ছোবল Jun 28, 2025
img
‘খলনায়ক’ হয়েই চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেছিলেন হানিফ সংকেত Jun 28, 2025
img
টিম ম্যান হিসেবে আমি দলের জয়ে ভূমিকা রাখতে চাই : তাসকিন Jun 28, 2025
img
‘‘বিচ্ছেদ হয়ে যাবে ভেবেছি’’- বিবাহবার্ষিকীতে আবেগঘন বার্তা অনামিকার Jun 28, 2025
img
প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়ালে বাফুফের ভুল লোগো, সমালোচনার মুখে ফেডারেশন Jun 28, 2025
img
বরগুনায় ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ১ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ২৩৪ Jun 28, 2025