পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছেড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এর মধ্য দিয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা পর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব পলাশ কার্যালয় ছেড়ে এসে সাক্ষাৎ দেওয়ার পর নগরীর খুলশীর জাকির হোসেন সড়ক থেকেও সরে গেছেন আন্দোলনকারীরা। এতে ওই সড়কে প্রায় ৩ ঘণ্টা পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
বুধবার (২ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও নগরীর জাকির হোসেন সড়ক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে ফিরে যান আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবার রাতে পটিয়া থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একদল নেতকর্মীর সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরের অপসারণ দাবি করে সংগঠনটি ‘পটিয়া ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সকাল ১০টার দিকে ‘চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে পটিয়া থানা অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
বিক্ষোভে যোগ দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিও।
দুপুর ১২টার দিকে তারা থানা ছেড়ে মিছিল নিয়ে বাইপাস এলাকায় গিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে পটিয়া বাইপাস মোড় থেকে ইন্দ্রপুল কাজীরপাড়া এলাকা পর্যন্ত সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মহাসড়কে যানজটের মধ্যে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী ও আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রীরা।
বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে সেনা সদস্যরা গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরও প্রায় তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।
এরপর খান তালাত মাহমুদ রাফি তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম ঘোষণা করেন। এরা হলেন পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর, উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুর রহমান এবং জেলা পুলিশের পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম। তাদের অপসারণ করা না হলে আবারও সড়কে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে সড়ক ছাড়েন রাফি।
এদিকে বুধবার বিকেল ৩টার দিকে ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীতে ডিআইজির কাছে গিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেকদল নেতাকর্মী। তারা ডিআইজিকে কার্যালয়ের বাইরে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। কিন্তু এতে ডিআইজির সম্মতি না পেয়ে তারা ওই কার্যালয়ের পাশে খুলশী থানার সামনে নগরীর জাকির হোসেন সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সড়কের উভয়পাশে যানবাহন আটকে আশপাশের সড়কেও যানজট সৃষ্টি হয়।
সড়কে অবস্থানকারীরা অধিকাংশই নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী বলে পরিচয় দিয়েছেন। কেউ কেউ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং কেউ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে জানান। তারা পটিয়া থানার ওসি’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে সড়কে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। আন্দোলনকারীরা পটিয়া থানার ওসি, সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলার এসপির অপসারণ দাবি করেন।
সন্ধ্যায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সঞ্জয় সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত জানাব। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যারা দায়ী, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে, মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতে পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
আরআর/টিএ