মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আজ বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই তার প্রথম এশিয়া সফর। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো- এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতি ওয়াশিংটনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা। যদিও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এই অঞ্চলকেই লক্ষ্যবস্তু করেছেন বৈশ্বিক শুল্ক নীতির অংশ হিসেবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রুবিও আসিয়ান-এর ১০ সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। রুবিওর এ সফর মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি মার্কিন মনোযোগ ফেরানোর একটি প্রচেষ্টা, যেখানে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় সংকট এতদিন বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। রুবিও বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা—দুই ভূমিকাই পালন করছেন।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর শুল্কনীতি এই সফরে ছায়া ফেলেছে।
আগামী ১ আগস্ট থেকে মালয়েশিয়াসহ ছয়টি আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রুবিও এ সফরে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের চেয়ে ভালো কৌশলগত ও অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর সভাপতি ভিক্টর চা বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে চীনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রচেষ্টার জবাব দেওয়া হচ্ছে।'
রুবিওর এটি লাভরভের সঙ্গে দ্বিতীয় সরাসরি বৈঠক হতে পারে। বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসন্তুষ্ট।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইও বৃহস্পতিবারের আলোচনায় অংশ নিতে পারেন, তবে রুবিওর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত। রুবিওর এই সফর নিয়ে ভিক্টর চা বলেন, ‘সাধারণত প্রশাসনের শুরুতেই এমন সফর হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই দেরিতে হলেও ভালো।'
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, রুবিওর অগ্রাধিকার হবে দক্ষিণ চীন সাগরে নিরাপত্তা সহযোগিতা, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, মানব পাচার এবং মাদকবিরোধী লড়াই নিয়ে আলোচনা।
এদিকে ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, মালয়েশিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং লাওস ও মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য শুল্ক হার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকিতেও ওই দেশ উদ্বিগ্ন। তারা বিষয়টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যাখ্যা চেয়েছে।
রয়টার্সের হাতে আসা আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের খসড়া যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়ে চলার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে একতরফা শুল্ক নীতির কারণে।’ এতে আরো বলা হয়েছে, ‘শুল্ক আরোপ প্রতিকূল ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিভাজনকে আরও গভীর করতে পারে।’
এ প্রসঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, রুবিও এই সফরে বাণিজ্য নিয়েও আলোচনা করতে প্রস্তুত এবং মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক পুনর্ব্যালান্সের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবেন। উল্লেখ্য, রপ্তানিনির্ভর আসিয়ান গোষ্ঠী বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি।
চীন থেকে সরবরাহ শৃঙ্খলা পুনর্গঠনের ফলে কয়েকটি সদস্য দেশ লাভবান হয়েছে। এই তালিকায় একমাত্র ভিয়েতনাম ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে, যার ফলে তাদের ওপর শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স