টাকার বিপরীতে কমল ডলারের দাম

টাকার বিপরীতে ডলারের দাম কমে ১২০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়া এবং আমদানি ব্যয় কমার প্রভাবে বাজারে ডলারের চাহিদা কমেছে। ফলে টাকার মান আগের চেয়ে কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি সাময়িক স্বস্তির ইঙ্গিত দিলেও বাজারে নজরদারি ও নীতিগত স্থিতিশীলতা ধরে রাখা জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার মার্কিং ডলার ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২০ টাকা ১০ পয়সায় ব্যাংকগুলো কেনাবেচা করেছে। অথচ মাসের শুরুতে ২ জুলাই এই দর ছিল ১২২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ৮৫ পয়সা পর্যন্ত। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে ডলারের দর কমতে থাকে এবং ১৪ জুলাই তা ১১৯ টাকায় নেমে আসে। যা গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত বছরের আগস্টে সর্বনিম্ন ১১৯ টাকা ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এবং রপ্তানি আয় দুটোই বাড়ছে। এর ফলে বাজারে ডলারের জোগান স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির মতো পণ্যের আমদানির খরচ তেমন বাড়েনি। যার প্রভাবে ডলারের ওপর চাপ কমেছে এবং দাম কমতির দিকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। পাশাপাশি জুন মাসে আইএমএফ, এডিবি, জাইকা এবং এআইআইবি থেকে বড় অংকের অর্থ সহায়তা আসায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভেও ডলার বেড়েছে। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের চলতি হিসেবে ঘাটতি কমেছে এবং ডলারের ওপর চাপ কম থাকায় দাম কমছে।

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ডলারের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। মাত্র দুই কার্যদিবসে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম রেকর্ড ভেঙে ১২৮ টাকায় উঠে যায়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক দামে রেমিট্যান্স কেনার অভিযোগ ওঠে এবং তাদের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। সেসময় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, কয়েকটি ব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্তে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ইচ্ছেমতো ডলারের দাম বাড়াচ্ছিল, যা সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম ঠিক হবে বাংলাদেশের বাজারেই।’

চলতি বছরের ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই দর নির্ধারণ করছে। অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন- এতে ডলারের দাম বেড়ে যাবে, কিন্তু বাস্তবে তা কমেছে।

দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে চলতি হিসাবের নেতিবাচক অবস্থার পরিমাণ কমেছে। ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে— এই ১১ মাসে বৈদেশিক লেনদেনে যে ভারসাম্যহীনতা ছিল, তা এখন অনেকটাই কমে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বল‌ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চার হাজার ৮৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে আমদানি হয়েছে ছয় হাজার ২৫ কোটি ডলার। ফলে এক হাজার ৯৩৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল দুই হাজার ২২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি ৪.১৭ শতাংশ কমেছে। এই সূচক আমাদের অর্থনিতীর জন্য ভালো সংবাদ। পাশাপাশি এটি মূল্যস্ফিতে নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে রেকর্ড প্রবাহ এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অংক এক অর্থবছরে দেশে আসা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয়ের এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও ডলারের জোগানে স্বস্তি এনে দিয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশের মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের এই অংক গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালে জুনে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছিল। এছাড়া আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।

আরআর

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুলাই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, রাষ্ট্রকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার প্রচেষ্টা : জিল্লুর রহমান Jul 15, 2025
img
প্রেম-কমেডির মোড়কে অ্যাকশন থ্রিলার ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ Jul 15, 2025
img
মনিকা রুপে ভক্তদের মন জয় করলেন অভিনেত্রী পূজা! Jul 15, 2025
img
ফের আসছেন শ্রীকান্ত তিওয়ারি, অক্টোবরেই ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান ৩’ Jul 15, 2025
img
বলিউডের পর্দায় রণবীর বনাম ববি, আসছে নতুন অ্যাকশন সিনেমা Jul 15, 2025
img
ন্যায়বিচারকে সহজপ্রাপ্য করে তোলাই সংস্কারের মূল লক্ষ্য: প্রধান বিচারপতি Jul 15, 2025
img
আপনার পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়েছে কি না, যাচাই করুন এই ৪ টুলে Jul 15, 2025
img
ট্রাম্পের সঙ্গে থাম্বস আপ ভঙ্গিতে ইরানি ফুটবল রেফারি আলিরেজা Jul 15, 2025
img
৩১ বছরেই না ফেরার দেশে কে-ড্রামার কাং সিও হা Jul 15, 2025
img
নতুন আইন পাস করল ইরানের পার্লামেন্ট Jul 15, 2025
img
দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মরিচ বাজারে কাঁচামরিচের মণ ১১ হাজার টাকা Jul 15, 2025
img
মিটফোর্ডের ঘটনার অন্যতম আসামি নান্নু গ্রেফতার Jul 15, 2025
img
বহিষ্কার করার পরে আর কি করতে পারি: আসাদুজ্জামান রিপন Jul 15, 2025
img
জেনে নিন দেশের বাজারে আজকের স্বর্ণ ও রুপার দাম Jul 15, 2025
img
ক্লিনটন, বুশ, ওবামা, বাইডেনকে বোকা বানিয়েছেন পুতিন, কিন্তু আমাকে পারেনি: দাবি ট্রাম্পের Jul 15, 2025
img
যুবদের জনসম্পদে রূপান্তরে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ Jul 15, 2025
img
এসি রুমে বসে রাজনীতি করার আর সুযোগ নেই : হান্নান মাসউদ Jul 15, 2025
img
বাংলাদেশে বিনিয়োগে মিশরীয় উদ্যোক্তাদের আহ্বান রিজওয়ানা হাসানের Jul 15, 2025
img
ঘরের মাঠে মাত্র ২৭ রানে গুটিয়ে লজ্জায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ Jul 15, 2025
img
আজ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে ঢাকার আকাশ Jul 15, 2025