মরদানি'র সঙ্গে নতুন সিরিজের মিল! চর্চা শুরু হতেই মুখ খুললেন সন্দীপ্তা সেন।
ওয়েব সিরিজ ‘বীরাঙ্গনা‘ মুক্তির প্রাক্কালে একান্ত আলাপচারিতায় সন্দীপ্তা সেন। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
এই প্রথম ‘বীরাঙ্গনা’য় আপনি পুলিশের চরিত্রে। চলচ্চিত্রে বা ওয়েব সিরিজে মহিলা পুলিশ মানেই তাকে নিজের কর্মক্ষেত্রে মিসোজিনির মুখোমুখি হতে হয়। ‘ছোটোলোক’-এও দেখেছি। এই সিরিজে সেই স্তরগুলো দেখা যাবে?
‘বীরাঙ্গনা’য় আমি চিত্রা বাসু। চিত্রার বাবা পুলিশ এবং সেও এই পেশায় যুক্ত। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় মহিলা পুলিশদের একটা তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা হয়, কী ই বা করতে পারবে এমনটা ধরে নেওয়া হয়। চিত্রা নিজেকে প্রমাণ করতে চায়, কিন্তু সুযোগ কম পায়। তারপর একটা সিরিয়াল ক্রাইমের ক্ষেত্রের চিত্রার ইনপুট সঠিক প্রমাণ হলে, তখন সবাই তাকে সিরিয়াসলি নিতে শুরু করে। বর সাপোর্টিভ হলেও ছদ্ম অভিযোগের সুরে বলে, ‘বউ তো গুন্ডা ধরতে ব্যস্ত’।
আপনার বাড়িতে কাজ নিয়ে এমন সমস্যা হয়?
– বাড়িতে মানুষ বলতে আমি আর সৌম্য। শ্বশুর-শাশুড়ি দু’জনেই প্রয়াত। আর সৌম্য খুবই সাপোর্টিভ। অনেক সময় দেরি করে ফিরেছি, সৌম্য ডিনার বানিয়েছে। আর সংসার চালাতে, ব্যস্ততা অনুযায়ী আমরা কাজ ভাগ করে নিই।
‘বীরাঙ্গনা’য় নারীর প্রতি ভায়োলেন্স বা হেট ক্রাইমের বিষয় রয়েছে। আমাদের দেশেও বেড়েছে। এবং যে কোনও পেশায় বিশেষ করে সফল নারীর প্রতি পুরুষের বৈষম্য বেড়েই চলেছে। ইন্ডাস্ট্রিতে এই বৈষম্য টের পান? ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা!
– আমি খুব কম এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি। তবে ছোট ছোট জিনিস তো হামেশাই হয়। সিরিয়ালের সেটের কথা বলি। ধরো টানা আমার সিন, একটু গ্যাপ চাই। কিন্তু নায়ক বলল, তাকে ছেড়ে দিতে হবে, তখন কিন্তু নায়কের কথাই শোনা হবে। আর সিরিয়ালের ক্ষেত্রে একটা কথা খুব শোনা যায়, পুরুষ অভিনেতার অপশন কম, তাই তাদের বেশি টাকা দেওয়াই যায়। পে ডিসপ্যারিটি আছেই। পুরুষ অভিনেতাদের একটু বেশিই প্যাম্পার করা হয়। এটা আমি দেখেছি।
‘বীরাঙ্গনা’য় সিরিয়াল কিলিংয়ের টার্গেট মহিলা, ইনভেস্টিগেশনে মহিলা পুলিশ। ‘মরদানি’-র সঙ্গে মিল আছে?
– না, ওই কেসটার সঙ্গে তেমন মিল নেই। তবে যেহেতু রানি মুখোপাধ্যায়কে আমরা পুলিশের চরিত্রে দেখেছি, অনেকের মনে হতে পারে মিল আছে।
অ্যাকশন দৃশ্য শুট করেছেন?
– যখন স্ক্রিপ্টটা পাই তখনই জানতে চেয়েছিলাম, অ্যাকশন সিকোয়েন্স আছে কি না! বেশ কিছু চেজিং সিকোয়েন্স আছে। খুব দৌড়েছি। বডি ডাবল নিয়ে টাফ অ্যাকশন দৃশ্যও আছে। পরিচালক নির্ঝর বলেই ফেলেছে, ‘তুমি এত ভালো দৌড়তে পারো!’
ইন্ডাস্ট্রিতে সাবালক হয়ে গিয়েছেন! ১৮ বছর পেরিয়েছেন। সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজের তুলনায়, সিনেমা কম! আফসোস হয়!
– আমাকে কেন ছবিতে কম সুযোগ দেওয়া হয়, এটা যারা ডাকে না, তারা বেটার বলতে পারবে! তবে হ্যাঁ, আমার আরও বেশি ছবি করা উচিত ছিল। তবে আমি থেমে থাকিনি। এরই মধ্যে হিট সিরিয়াল বা ওয়েব সিরিজ হয়েছে। যেটা পেলাম না, সেটা পেলে কী হত, ভেবে সময় নষ্ট করতে চাই না। আমি খুশি। তাছাড়া আমি খুব সিলেক্টিভ। স্ক্রিপ্ট পড়ে ভিতর থেকে সাড়া না পেলে, হ্যাঁ বলি না।
কাজ ছেড়েছেন?
– প্রচুর কাজ ছেড়েছি। বাজে কাজ করার চাইতে অপেক্ষা করব!
‘আপিস’ খুব প্রশংসিত। সুদীপ্তা চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজ করলেন?
– ছবিটা যখন কলকাতা ফিল্মোৎসবে দেখানো হয়, তখনই লোকজন দারুণ ফিডব্যাক দিয়েছিলেন ইমোশনাল হয়ে। অনেকেই রিলেট করতে পেরেছেন। সকলেই আপ্লুত হয়েছেন, আর আমরাও। সুদীপ্তাদির সঙ্গে কাজ করা নিয়ে টেনশনে ছিলাম। প্রথম কাজ ওঁর সঙ্গে। তবে কাজটা করে দারুণ খুশি।
নারীকেন্দ্রিক কোনও প্রোজেক্টে যখন কাজ করেন, তখন নারী বা পুরুষ পরিচালক বিশেষে কী সূক্ষ্ম তফাত হয়ে যায়? আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে?
– উমম… লুক বা বডি ল্যাঙ্গোয়েজের ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম তফাত হয়ে যায়। রিসেন্ট কাজ যদি ধরি যেমন, অদিতি রায় পরিচালিত ‘নষ্টনীড়’ আর নির্ঝর মিত্র পরিচালিত ‘বীরাঙ্গনা’। তুলনা টানা মুশকিল। কিন্তু যখনই মহিলা পরিচালক হন, তখন খুব সূক্ষ্ম-সূক্ষ্ম ইনপুট দিতে পারেন চরিত্রের ইমোশন, শরীরী ভাষা বা লুক নিয়ে। ছেলেরা পারে না, আমি একেবারেই বলছি না, তবে মহিলা পরিচালকের ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম তফাত আমি অনুভব করেছি।
আপনি নিজে সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। গ্ল্যামার জগতের স্ট্রেস সামলাতে সেটা সাহায্য করেছে?
– ভীষণ সাহায্য করেছে। আমাদের কাজ প্রচণ্ড স্ট্রেসফুল, এবং অনিশ্চয়তায় ভরপুর, ব্যালান্স করতে সাহায্য করেছে।
আর অন্যদের সাহায্য করেন?
– হ্যাঁ, হ্যাঁ, গত দু-তিনমাস প্র্যাকটিস করতে পারছি না। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি আমি কিন্তু প্রফেশনালিও কাউন্সেলিং করি।সাইকোলজিকেও কিন্তু আমি ছাড়িনি।
‘নষ্টনীড়’ এবার হিন্দিতে হচ্ছে। আপনিই লিড! শুটিং শুরু হচ্ছে। জাতীয় স্তরে মেগায় দেখা যাবে আপনাকে?
– দেখো, এটা নিয়ে আমি এই মুহূর্তে অফিশিয়ালি কিছুই বলতে পারব না।
এমকে/টিএ