২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন, যা ওই নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছিল। বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই প্রথা বন্ধ করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, আরপিওর খসড়ায় বিনা ভোটে নির্বাচনের সুযোগ বন্ধ করার বিধান রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বন্ধের ক্ষমতা ইসির ফিরে পাওয়া, এক প্রার্থীর সর্বোচ্চ দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করাসহ বেশ কিছু বিধান যুক্ত হচ্ছে খসড়ায়।
১০ জুলাই আরপিও সংশোধনের বিষয়ে কমিশন সভা হয়। সভার পর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ নিয়ে পরে বিশদ আলোচনা হবে। আগের দিন প্রস্তাব আলোচ্যসূচিতে থাকলেও তা শুধু উপস্থাপন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনো আসনে একজন মাত্র প্রার্থী থাকলে তাকে ‘না’ ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। প্রয়াত সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ‘না’ ভোট চালু করেছিল। তবে ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সংসদে ওই বিধান পাস করেনি।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা আগে ইসির ছিল। সেটা বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন ইসির কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা আছে। পুরো আসনের নির্বাচন করার বিষয়টি ফেরত পাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, এটা ফেরত পাব।
ইসির প্রস্তাবিত আরপিওর খসড়া অনুযায়ী, একজন প্রার্থী দুটির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। দুটির বেশি আসনে কেউ প্রার্থী হলে তার সব মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাবে। সংশোধনী প্রস্তাবে দুই বা ততোধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সমান ভোট পেলে তাদের মধ্যে পরে আবার ভোট করার বিধান যুক্ত হচ্ছে।
খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির পর ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এ ছাড়া সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে অথবা তপশিল ঘোষণার ৪৫ দিন আগে থেকে ফল ঘোষণার ১৫ দিন পর পর্যন্ত ইসির অনুমতি ছাড়া জেলা থেকে বিভাগীয় প্রশাসন-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি করা যাবে না।
এ ছাড়া সংশোধিত আরপিওর খসড়ায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে থাকলে প্রার্থী হতে ন্যূনতম স্নাতক পাস; হলফনামায় দেশে ও বিদেশে আয়ের উৎস জানানো; হলফনামায় সর্বশেষ সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, আরপিও পর্যালোচনা চলছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনের মতামতকে প্রাধান্য দিচ্ছি। ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব বিষয় আসবে, সেগুলো যুক্ত করা হবে।
টিকে/