সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন দুইটি প্রধান ভাগে বিভক্ত— একদিকে বিএনপি, অন্যদিকে জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামপন্থী দল। তার ভাষায়, অনেক ছোট ছোট দল যারা একসময় বিএনপি, আওয়ামী লীগ কিংবা জামায়াতের সঙ্গে ছিল, তারা এখন বড় অংশে জামায়াতের দিকে ঝুঁকছে। ফলে বিএনপি কার্যত একা হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, “মাঠে এখন বিএনপির সঙ্গে হাতে গোনা দুই-চারটি দল আছে, তবে এভাবে চলতে থাকলে তারা টিকতে পারবে না এবং শেষ পর্যন্ত জামায়াতের সঙ্গে মিলিত হবে। এই বাস্তবতা বিএনপি বুঝে গেছে এবং তাই বিএনপি-জামায়াতের সংঘাত এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
রনি আরও বলেন, “১৯৯১ সাল থেকে গত প্রায় ৩৫-৩৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনে করেছে, পুরো বাংলাদেশ তাদের জন্যই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কেবল তাদের সহায়ক শক্তি, যারা তাদের কথায় হাসবে, কাঁদবে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই মনোভাবের ওপর প্রথমবারের মতো আঘাত এসেছে। এখন ছোট দলগুলো আর আগের মতো মাথা নত করছে না।”
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “যেমন আফগানিস্তানে তালেবান ছাত্ররা, যাদের একসময় খাটো করে দেখা হতো, তারা আমেরিকান ও রাশিয়ান বাহিনীকে পরাজিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেছে। আমাদের দেশের মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়েও তাচ্ছিল্য করা হয়, কিন্তু সময় বদলে গেছে। ছাত্রদের নেতৃত্বকে খাটো করে দেখলে চলবে না।”
রনি আরও বলেন, “আমাদের অনেক রাজনৈতিক সিনিয়র নেতারা এখনও এই নতুন বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে পারছেন না। ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ, চীন-বাংলাদেশ কিংবা আমেরিকা-পাকিস্তান ইত্যাদি সম্পর্কের সঙ্গে দেশের রাজনীতি যে গভীরভাবে জড়িত, সেটি তারা উপেক্ষা করছেন। এই ভুল দৃষ্টিভঙ্গি চলতে থাকলে ভবিষ্যতের নির্বাচন নয়, বরং সংঘর্ষই অনিবার্য হয়ে উঠবে।”
তিনি বলেন, “রাজনীতিতে এখন এমন ভাষার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে আগে কখনো দেখা যায়নি। তারেক রহমানকে নিয়ে বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যেভাবে অশ্লীল স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, তা নজিরবিহীন। একইভাবে বিএনপির পক্ষ থেকেও পাল্টা স্লোগান আসছে, যা অতীতে হয়নি।”
রনি মন্তব্য করেন, “একজন মানুষ কাউকে আঘাত করার আগে যেমন মুখে আগ্রাসী হয়, এখন রাজনীতিতেও তাই হচ্ছে। মুখের ভাষায় একে অন্যকে আক্রমণ করে আসলে সবাই নিজেদের ‘প্রস্তুত’ করছে— শারীরিকভাবে সংঘর্ষে নামার জন্য। এই সতর্ক সংকেতগুলো আমাদের বুঝতে হবে।”
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “রাজপথে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষ এখন সময়ের অপেক্ষা। রাজনৈতিক সমীকরণ ঠিকভাবে না মিললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
এমআর/টিএ