লিবিয়া উপকূল থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গ্রিসে পৌঁছানো ২১৬ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এই অভিবাসীদের সবাইকে লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন গ্রিসের অভিবাসন ও আশ্রয় বিষয়ক মন্ত্রী থানোস প্লেভরিস।
এথেন্স কর্তৃপক্ষ বলেছে, দেশটির ক্রিট ও গাভদোস দ্বীপে আসা মোট ২১৬ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। সংশ্লিষ্ট অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সবাই লিবিয়া থেকে যাত্রা করেছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে হেলেনিক কোস্ট গার্ড।
গ্রিক কোস্টগার্ড ও কিছু বাণিজ্যিক জাহাজ এই অভিযান পরিচালনা করেছে। উদ্ধার করা ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং মিসরসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছেন। গ্রিসের অভিবাসন ও আশ্রয় বিষয়ক মন্ত্রী থানোস প্লেভরিস ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, লিবিয়া থেকে অনিয়মিতভাবে যারা গ্রিসে প্রবেশ করেছেন, তারা কেউ আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের কোনও অভ্যর্থনা শিবিরে নেওয়া হবে না। বরং পুলিশি হেফাজতে রেখে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। গ্রিস সরকার উত্তর আফ্রিকা থেকে আগত অভিবাসীদের জন্য সাময়িকভাবে আশ্রয় আবেদন গ্রহণ বন্ধ রেখেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ জানানো হলেও গ্রিস বলছে, বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি এমন যে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এর আগে, জুলাইয়ের শুরু থেকে ক্রিট দ্বীপের উপকূলে ২ হাজারের বেশি মানুষ নৌকায় করে পৌঁছেছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পর্যটন মৌসুমে এমন অভিবাসন প্রবাহ দ্বীপের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
শনিবারের আগে তিনটি আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে আরও ১৯০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ক্রিট দ্বীপের উপকূলে পৌঁছায় এবং তাদেরও আটক করা হয়। আরেকটি দলকে উদ্ধার করা হয় তুরস্কের উপকূলসংলগ্ন আগাথোনিসি দ্বীপের কাছে। সেখানকার ১১ জনের মধ্যে একজন গুরুতর আহত ছিলেন এবং পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইআরটি।
মন্ত্রী প্লেভরিস ডেইলি মেইলকে বলেছেন, যারা নৌকায় করে ইউরোপে প্রবেশ করতে চান, বিশেষ করে বাংলাদেশ, মিসর ও পাকিস্তানের মতো ‘নিরাপদ’ দেশ থেকে তাদের জন্য এখন থেকে আমাদের বার্তা পরিষ্কার। সেটি হচ্ছে, গ্রিস আর কোনও হোটেল নয়। কেউ যদি অবৈধভাবে নৌকায় উঠে এখানে আসেন, তাহলে তাদের জন্য হয় পাঁচ বছরের জেল অথবা ফেরত যাওয়ার টিকিট দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ক্রিটে একটি স্থায়ী আটককেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও স্থানীয় জনসাধারণের বিরোধিতার কারণে আপাতত সেটি স্থগিত রাখা হয়েছে। এটির পরিবর্তে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে আটক অভিবাসীদের সেখানে রাখা হবে।
বর্তমানে গ্রিসের অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা আরও বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যদিও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ধরনের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে গ্রিক সরকার বলছে, অর্থনৈতিক অভিবাসীদের ঠেকাতেই এই পদক্ষেপ জরুরি। ইনফোমাইগ্রেন্টস।
এমকে/এসএন