মানুষের জীবনে সন্তান মহান আল্লাহর নিয়ামত। আল্লাহ যাকে চান তাকেই এ নিয়ামত দান করেন। তিনি ছাড়া কেউ সন্তান দিতে পারে না। তিনি যাকে চান কন্যা সন্তান দান করেন, আর যাকে চান পুত্র সন্তান দান করেন। কাউকে আবার পুত্র ও কন্যা উভয় সন্তানই দান করেন; যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন।
ইসলাম এমন এক পরিপূর্ণ জীবনবিধান, যেখানে প্রতিটি দুঃখের মধ্যেও সান্ত্বনা রয়েছে, প্রতিটি কষ্টের পরশেও প্রতিদান রয়েছে। সন্তান জন্মেই মারা গেলে, সেই সন্তানের মৃত্যু মা-বাবার জন্য শুধু দুঃখ নয় বরং হতে পারে জান্নাতের সোপান।
কোরআন-সুন্নাহ আমাদের এই ব্যথার মুহূর্তকে আশার আলোয় দেখিয়েছে, ধৈর্য ও তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে আল্লাহর অসীম প্রতিদান ও রহমতের দরজা খুলে দিয়েছে।
জান্নাতের সুসংবাদ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
যে ব্যক্তির তিনটি সন্তান মারা যায়, সে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাবে। সাহাবিরা বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ, যদি দুটি হয়? তিনি বললেন দুটি হলেও (সহিহ বুখারি:১২৪৯, সহিহ মুসলিম: ২৬৩২)
যদি কোনো মুসলমান ধৈর্য ধারণ করে, সন্তানের মৃত্যুতে আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকে, তবে সেই সন্তান তার জন্য জান্নাত লাভের কারণ হবে।
সন্তান হবে জান্নাতে মা-বাবার সুপারিশকারী
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ছোট শিশু জান্নাতে থাকবে, আর সে তার মায়ের কাপড় আঁকড়ে ধরে জান্নাতে টেনে নিয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম: ২৬৩৫)
অর্থাৎ, শিশুরা জান্নাতে থাকবে এবং তারা তাদের মা-বাবার জন্য সুপারিশ করবে। এটি আল্লাহর একটি বিরাট অনুগ্রহ।
সন্তান হবে সওয়াবের সঞ্চয় (ذخرًا)
একটি দোয়ায় রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়েছেন,
اللهم اجعله لنا فرطًا، وأجرًا، وذخرًا، وشفيعًا مُجابًا হে আল্লাহ! একে আমাদের জন্য আগাম প্রেরিত (ফরতান), সওয়াব, সঞ্চয় এবং কবুলযোগ্য সুপারিশকারী করে দাও। (মুসনাদ আহমদ ১৯৭৮) এ দোয়ায় চারটি দানের কথা এসেছে, ১. ফরতান (فرطًا): আমাদের আগে জান্নাতে পৌঁছাবে। ২. অজর (أجرًا): সওয়াব হবে। ৩. যাখর (ذخرًا): সঞ্চিত পুণ্য। ৪. শাফি' (شفيعًا): সুপারিশকারী।
বাইতুল হাম্দ (ধন্যবাদ ও শোকরের ঘর)
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
যখন আল্লাহ কোনো মুমিনের সন্তানের জান কবজ করেন, আর সে বলে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ আমি নিয়ে নিলাম, অথচ সে ধৈর্য ধরেছে? এরপর আল্লাহ বলেন, তাহলে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করে দাও, যার নাম হবে বাইতুল হাম্দ। (তিরমিজি: ১০২১) এ ঘরটি জান্নাতে বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন স্থানে থাকবে।
সন্তান জান্নাতের পাখি হিসেবে থাকবে
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
তারা জান্নাতে মুক্তপাখির মতো উড়ে বেড়াবে এবং জান্নাতের ফল ভক্ষণ করবে। (সহিহ মুসলিম:২৬৩)
এ অবস্থায় তারা শান্তি ও পূর্ণ নিরাপত্তায় থাকবে এবং জান্নাতের ভোগ-সুখ উপভোগ করবে।
সওয়াব কিয়ামত পর্যন্ত বহমান থাকবে
যেহেতু সন্তান মারা যাওয়ার পর মা-বাবা যদি সবর করেন, সওয়াবের নিয়ত করেন, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেন, তবে সেই ধৈর্যই হয়ে যায় তাদের জন্য সদাকায়ে জারিয়া, যার সাওয়াব কিয়ামত পর্যন্ত চলবে।
সন্তান হারানো মা-বাবার জন্য দুনিয়ার সবচেয়ে কষ্টদায়ক ঘটনা হলেও, ইসলামের আলোকে এটি জান্নাতের সেতুবন্ধনের মতো, যদি তারা ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেন। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এ ধরনের পরীক্ষায় ধৈর্যের সাথে উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দেন। আমিন!
এফপি/টিএ