ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে নতুন সরকারের অঙ্গীকার জরুরি

আগামীতে নির্বাচিত নতুন সরকারকে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করে আস্থা পুনর্গঠনের এই বৃহত্তর লক্ষ্যে সরকারকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে- এমনটাই মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর বনানীতে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। পিআরআইয়ের সেন্টার ফর ম্যাক্রোইকোনমিক অ্যানালাইসিস (সিএমইএ) অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি)-এর সহযোগিতায় ‘মান্থলি ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই)’ আয়োজন করে।

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা, বিনিয়োগে স্থবিরতা, বাণিজ্যনীতি ও আর্থিক খাত সংস্কার বিষয়ে এই অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম বলেন, রাজস্ব আদায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন আলাদা করার মতো সংস্কারগুলো এখনও চলমান রয়েছে।

সাবেক মন্ত্রী ড. মইন খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর শুল্ক নীতি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় আমরা অনুকূল বাণিজ্য চুক্তিতে পিছিয়ে আছি।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করা জরুরি।

পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার এবং প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ড. সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো মূলত বিনিয়োগনির্ভর, ভোগনির্ভর নয়। বেসরকারি ঋণ প্রবাহের ধীরগতি, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির হ্রাস এবং বিনিয়োগের পরিমাণ কমে জিডিপির প্রায় ২৯ শতাংশে নেমে আসায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে, যদিও সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমনির্ভর খাত- যেমন তৈরি পোশাক ও ফুটওয়্যারের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার উপর নির্ভর করে রপ্তানি করে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র একটি বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান বাজার হওয়ায়, আমাদের একটি অনুকূল বাণিজ্য চুক্তির প্রয়োজন। কেবল শ্রমনির্ভর প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার উপর নির্ভর করলেই চলবে না। আমাদের এমন একটি প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য চুক্তি দরকার, কারণ যদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো আরও ভালো শর্তে চুক্তি করে, তাহলে বৈশ্বিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হ্রাস পাবে। এটি আমাদের জন্য একটি নতুন এবং জরুরি চ্যালেঞ্জ।

প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে গৃহীত নীতি ও পদক্ষেপগুলো আগামী ১ থেকে ৩ বছর ধরে অব্যাহত রাখতে হবে। তাই নির্বাচিত নতুন সরকারকে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার এই বৃহত্তর লক্ষ্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।”

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি হাই কমিশনার ক্লিনটন পোবকে। তিনি বলেন, এমএমআই ইভেন্টটি জটিল অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো বোঝার এবং সেগুলোর সাথে কার্যকরভাবে জড়িত হওয়ার একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

প্যানেল আলোচনায় এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের রাজস্ব জায়গা সীমিত। করনীতি, ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জিডিপি হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি, যদিও তা কষ্টদায়ক হতে পারে। এনবিআরের নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে স্পষ্ট পৃথকীকরণ না থাকলে অর্থবহ অগ্রগতি অসম্ভব।

প্যানেল আলোচনার পর মুদ্রানীতি, মুদ্রাস্ফীতি ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব প্রশাসনের ডিজিটালাইজেশন নিয়ে অংশগ্রহণমূলক উন্মুক্ত আলোচনা হয়।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশরক্ষায় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেনাবাহিনী : চিফ প্রসিকিউটর Oct 16, 2025
img
জুলাই সনদে দলগুলো সই না করলে দেশের আকাশ কালোমেঘে ছেয়ে যাবে: রিজভী Oct 16, 2025
img
বাবা হলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ Oct 16, 2025
img
হানিয়া আমিরকে জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত ঘোষণা Oct 16, 2025
img
র‍্যাবের ওপর হামলা, সিদ্ধিরগঞ্জে গ্রেপ্তার ১ Oct 16, 2025
img
মিডিয়া ছেড়ে দেওয়ায় আমার বরকত বেড়েছে : সানাই মাহবুব Oct 16, 2025
img
নির্দ্বিধায় চালকের পাশে বসে গেলেন অভিনেতা ডা. এজাজ Oct 16, 2025
img
গাজায় ত্রাণ প্রবেশে রাফাহ ক্রসিং খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ইসরাইলের Oct 16, 2025
img
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি জামায়াত : গোলাম পরওয়ার Oct 16, 2025
img
সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা Oct 16, 2025
img
সংসদ ভবন এলাকায় আগামীকাল ড্রোন ওড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা Oct 16, 2025
img
রাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ছাত্রদল প্যানেলের Oct 16, 2025
img
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে স্কোয়াড ঘোষণা Oct 16, 2025
img
ঢামেকে ভুয়া চিকিৎসককে হাতেনাতে ধরলেন রোগীর স্বজনরা Oct 16, 2025
img
শিক্ষকদের অপমান করে উন্নয়ন সম্ভব নয় : ড. মঈন খান Oct 16, 2025
img
এইচএসসির ফলাফল দেখে চমকে গেলেন কেয়া পায়েল ! Oct 16, 2025
img
২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ১৯ দল চূড়ান্ত, বাকি ১ টি Oct 16, 2025
img
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে নেপালের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক Oct 16, 2025
img
নোয়াখালী বিভাগ দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও Oct 16, 2025
img
ডাকসু-জাকসু-চাকসুর প্রতিচ্ছবি আগামীতেও জাতি দেখবে : জামায়াত আমির Oct 16, 2025