ভাই-ব্রাদারদের নিয়েই এই সরকার গঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও চিকিৎসক আব্দুন নূর তুষার। তিনি বলেছেন, ‘ড. ইউনূস দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন, ফলে দেশের অনেক মানুষকে ভালোভাবে চিনতেন না।
তাই গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচিত কয়েকজনকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। তার ধারণা ছিল তারা সাহায্য করবেন।
কিন্তু তারাই আবার নিজের ভাই-ব্রাদার এমনকি ‘পোষ্য ভাই’-দের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন। এই প্রক্রিয়াতেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখন ভাই-ব্রাদারদের দিয়েই সরকার চলছে।’
সম্প্রতি নবনীতা চৌধুরীর ইউটিউব চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে আবদুন নূর তুষার এসব কথা বলেন।
মাইলস্টোন কলেজের দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে আবদুন নূর তুষার বলেন, ‘এই বিমানবন্দর অনেক পুরোনো। এর আশপাশে বহুতল ভবন, আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে, যা একেবারেই অনুচিত ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এমন অবকাঠামো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। ভবিষ্যতে সরকারকে এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত দুর্ঘটনার সঠিক তদন্ত হয় না, ঘটনার কার্যক্রমও আমরা জানতে পারি না। দুর্ঘটনার পর কী পদক্ষেপ নেওয়া হলো বা ভবিষ্যতে যাতে তা না ঘটে সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার বক্তব্য থাকে না। মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নিহত হয়েছেন-স্বাভাবিকভাবেই এতে মানুষের আবেগ বেশি থাকবে। এখানেই মৃতের সংখ্যা গোপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এক্ষেত্রে সরকার পরিষ্কারভাবে মৃতের সংখ্যা তাদের কাছে তুলে ধরতে পারেননি।
সেকারনেই এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।’
সরকারি তথ্য প্রকাশে আস্থার অভাব বলে মনে করেন আবদুন নূর তুষার। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি ঘোষিত মৃতের সংখ্যা মানতে চাচ্ছে না, তার পেছনে একটি স্পষ্ট কারণ রয়েছে—সরকারের ওপর মানুষের আস্থা নেই। আমাদের দেশে অতীতেও বহু দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা গোপনের অভিযোগ এসেছে। রানা প্লাজা, শাপলা চত্বর কিংবা তথাকথিত ‘জঙ্গি’ দমনের ঘটনাতেও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ ছিল। এসব অভিজ্ঞতা থেকেই জনগণের মনে এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এই সন্দেহ দূর করতে হলে গণমাধ্যম, সরকার, প্রশাসন এবং একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থাকে একত্রে কাজ করতে হবে। সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই অবিশ্বাস দূর হবে না।
প্রেস সচিবের সম্প্রতি বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রেস সচিব বলেছেন বাংলাদেশে নাকি মৃতের সংখ্যা গোপন করা যায় না। তাহলে গত জুলাইতে যখন তারা নিজেরাই বলছিলেন মৃতের সংখ্যা গোপন করা হচ্ছে, তখন কি সেটা ভুল ছিল? রানা প্লাজা, শাপলা চত্বর, গুম-খুন-সব ক্ষেত্রেই মৃতের সংখ্যা নিয়ে অভিযোগ ছিল। তাহলে এখন উল্টো কথা কেন বলা হচ্ছে?’
আন্দোলন বা বিক্ষোভ হলেই নাগরিকদের ওপর বলপ্রয়োগের সংস্কৃতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তুষার। তিনি বলেন, ‘কারো ওপর বলপ্রয়োগ করতে হলে তা হতে হবে আইনের শাসনের মধ্যে থেকে। কোনো দাবিতে আন্দোলন করলেই তাকে পেটানো যাবে-এটা কোনো আইনের বিধান নয়। কাউকে ট্যাগ দিয়ে বা রাজনৈতিক পরিচয়ে দোষী সাব্যস্ত করে নির্যাতন করা ঠিক নয়। সরকার নিজে যখন এসব আইন মানে না, তখন জনগণও সরকারকে মানতে চায় না। এই অবস্থাই সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।’
টিকে/