৭১ নিয়ে জামায়াত আগে ক্ষমা চাক, তারপর বিএনপির সমালোচনা করুক : টুকু

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে আগে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি বলেছেন, জামায়াত তারপর অন্য দলের সমালোচনা করুক।

শুক্রবার (২৫ জুলাই) বাদ জুমা উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সারিয়া আকতারের পরিবারকে সহমর্মিতা জানানো শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন টুকু। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তুরাগ থানাধীন নয়ানগর রফিক মোল্লার বাড়ি জামে মসজিদ এলাকায় নিহত সারিয়া আকতারের বাসায় যান তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে টুকু বলেন, ‘বিএনপি অতীতে সরকারে থেকেছে, কাজ করেছে। আজকে অর্থনৈতিক যা কিছু অবকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে, এটা জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেগম জিয়ার আমলে দেশে সবচেয়ে বেশি শিল্পায়ন হয়েছিল। সুতরাং জামায়াতে ইসলামী কী বললো, সেটা আমাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় না। জামায়াত একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যে অপকর্ম করেছিল, তার জন্য জনগণের কাছে আগে ক্ষমা চাক, তারপর অন্য দলের সমালোচনা করুক।’

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামায়াত একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। শুধু তাই নয়- আল বদর, আল শামস বাহিনী গঠন করে দেশের মানুষকে তারা হত্যা করেছে। সুতরাং জামায়াত কী বললো, না বললো- এটা বিএনপির কাছে বিবেচ্য নয়। বিএনপির কাছে এখন বিবেচ্য, বাংলাদেশের মানুষের যে ভোটাধিকার হরণ হয়ে গিয়েছিল, সেটা ফিরিয়ে আনা। মানুষ যাকে পছন্দ করবে, তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে নিজেদের পছন্দমত সরকার প্রতিষ্ঠা করবে-এটাই বিএনপির চাওয়া।’

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘দেশে গত কিছুদিন ধরে যেসব ঘটনা ঘটছে, দেশবাসী মনে করে- সেগুলো পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে। দুর্ঘটনা এ দেশে অনেক হয়েছে, গার্মেন্টসে মানুষ পুড়ে মারা গেছে। বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে। কিন্তু মিছিল করে সচিবালয় আক্রমণ করা দেখিনি। তারপর দেখলাম, পতিত শক্তি যারা চলে গেছে, তাদের স্লোগান হয়েছে। তাতে বুঝা যায়, কারা এসব করছে। নির্বাচন যত দেরি হবে, ততই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা এদের জন্য সুবিধার হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি নির্বাচন হবে, সেটা আগামী ফেব্রুয়ারিতেই হবে বলে আমরা জানি। তবে কিছু চক্র তো আছে, যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। যারা চায় না, বাংলাদেশ আবার গণতন্ত্রের ধারায় ফেরত আসুক, তারা এইসব বিষয়কে ইস্যু করে নানান রকমের সমস্যা সৃষ্টি করবে। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল।

নির্বাচন করার দল, নির্বাচনমুখী দল। আমরা মনে করি, এসব কিছুকে উত্তোরণ করে আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব এবং ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন হবে। কিছু লোক সংঘাত তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, এর চেয়েও খারাপ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন হয়েছে। সুতরাং নির্বাচনের সাথে এটার (বিমান দুর্ঘটনা) কোনো সম্পর্ক নেই।’

টুকু আরও বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা প্রতিটি শহীদ পরিবারে যাচ্ছি, উনার পক্ষ থেকে সমাবেদনা জানাচ্ছি। শহীদ সারিয়া আকতারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি, সান্ত্বনা দিয়েছি। এই করুণ দৃশ্য তো দেখার মতো না। এটা কারো জন্যই কাম্য না। যে ফুল এখনো ঠিকভাবে ফোটেইনি, সেই ফুলটা দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেল।’

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, ‘যে নিষ্পাপ ফুলগুলো চলে গেছে, সেগুলো তো আর ফেরত আনা যাবে না। তবে আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করি, আলাহ যেন তাদেরকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থানে রাখেন। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাজ সরকার করছে, আমাদের কাজ আমরা করছি। এটি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, নিশ্চয় তারা সেটা করছেন। যাদের বাচ্চা চলে গেছে, সেটা তো আর ফিরে আসবে না। এখন সরকার যদি সেই পরিবারগুলোকে কোনো অনুদান দেয়, সেটা সরকারের ওপর নির্ভর করবে।’

এ সময় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, এবিএমএ রাজ্জাক, এম কফিল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এমআর 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সজীব ওয়াজেদ জয়কে সভাপতি করে দল পুনর্গঠনের পথে আ. লীগ Jul 26, 2025
img
সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে দেশে জগাখিচুড়ি চলছে : মির্জা ফখরুল Jul 26, 2025
img
জিএসএলে শিরোপা না পেলেও দলের পারফরম্যান্সে খুশি অধিনায়ক সোহান Jul 26, 2025
img
মমতার ‘পাড়া’ প্রকল্প ভোটের রাজনীতি না উন্নয়ন? Jul 26, 2025
img
চীনে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি Jul 26, 2025
img
১৪ দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা Jul 26, 2025
img
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির ঘটনায় সিএমএইচে আহতদের খোঁজ নিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা Jul 26, 2025
img
রেলকে লাভজনক করতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ Jul 26, 2025
img
স্ক্রিনশট প্রকাশ করে দেশের আলোচিত নারী উদ্যোক্তার অভিযোগ Jul 26, 2025
জনগনের সেবায় র‍্যাবের সৃষ্টি,অবৈধ আদেশ না মানার আহবান Jul 26, 2025
img
মহেশপুর সীমান্তে ৩১ স্বর্ণের বার উদ্ধার Jul 26, 2025
img
ক্ষমতা পরিবর্তনের ভয় না থাকলে সরকার দানবীয় হয়ে ওঠে : আসিফ নজরুল Jul 26, 2025
img
ব্যাংক খাতের ৮০ শতাংশ অর্থ নিয়ে গেছে, যা পুনর্গঠনে লাগবে ৩৫ বিলিয়ন ডলার : অর্থ উপদেষ্টা Jul 26, 2025
img
‘এক টন কয়লাও ইসরাইলে যাবে না’, হুমকি কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের Jul 26, 2025
img
ভোলায় নামতে শুরু করেছে জোয়ারের পানি, স্বাভাবিক হচ্ছে ফেরি চলাচল Jul 26, 2025
img
পদত্যাগ দাবিতে মালয়েশিয়াজুড়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ Jul 26, 2025
img
বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়ার অদম্য পথযাত্রার সূচনা করেছে জুলাই অভ্যুত্থান : বাণিজ্য উপদেষ্টা Jul 26, 2025
img
আমেরিকান প্রবাসী জিনাত ফেরদৌসের অভিষেক জাতীয় বক্সিংয়ে Jul 26, 2025
আমিরাতে ভিসা বন্ধ, ধসে পড়ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ট্যুরিজম সাম্রাজ্য! Jul 26, 2025
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এআই প্রযুক্তি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ Jul 26, 2025