দীর্ঘ ৩৯ বছর পর অন্তত ১৬৮ ধরনের সেবা এবং সেবা উপকরণে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে শুল্ক বাড়াতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। এরইমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এর অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে বন্দরের এই সিদ্ধান্তে বিদেশি অপারেটরগুলো জাহাজ এবং কনটেইনার ভাড়া বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক অনাপত্তি পত্রে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য এবং জাহাজের ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকেই এই প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল কয়েক মাস আগেই। বন্দরের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ১৬৮ রকম সেবার ট্যারিফ বাড়বে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে। শুধু ৪ ধরনের সেবার ট্যারিফ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগের ট্যারিফ এতোদিন পরে বাড়ছে। তাই তুলনামূলকভাবে অতোটা বেশি না। ভোক্তাদের ওপর এই ট্যারিফ তেমন প্রভাব ফেলবে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিসহ এটি আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে; অনুমতি পেলে এটি সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।
আগে বন্দরের একটি কনটেইনার স্ট্যাফিং চার্জ ২ দশমিক ৭৩ ডলার থাকলেও এখন তা ৬ দশমিক ৪১ ডলার করা হচ্ছে। একইভাবে লিফট অন-লিফট অফ চার্জ বাড়ছে আড়াই ডলার। বাড়ছে পোটর ডিউজ, পাইলটিং চার্জ, বার্থ হায়ার, স্টোরেজ চার্জ এবং বার্থিং-আন বার্থি চার্জও।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক সাকিফ আহমেদ সালাম বলেন, ব্যাংকের সুদসহ নানা খরচে এমনিতেই ব্যবসায়ীরা চাপের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। এটি হলে চাপ আরও বাড়বে ব্যবসায়ীদের ওপর।
একদিকে বন্দরের ট্যারিফ যেমন বাড়ছে, তেমনি পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ট্যারিফ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বেসরকারি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর (আইসিডি) মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনও (বিকডা)। আর এতেই অসন্তোষ বাড়ছে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে। সবশেষ ১৯৮৬ সালে ট্যারিফ বাড়িয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর তখন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান ছিল ৩১-৩২ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে ডলার রেট ১২১ থেকে ১২৩ টাকা।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, এই শুল্ক বাড়লে এর প্রভাব পড়বে আমদানি ও রফতানিকারকদের ওপর। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেটি আরও বাড়িয়ে তুলবে। এতে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে কিনা; সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম বলেন, এ ধরনের অযাচিত সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখন নয়। এটি স্থগিত করে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
অনুমোদিত প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ১০ হাজার জি আর টি পাইলট চার্জ ৮০০ ডলার এবং ২০ হাজার জি আর টি টাগবোট চার্জ ৩ হাজার ৪১৫ মার্কিন ডলার করা হচ্ছে। তবে, বন্দরের ট্যারিফ কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি না করতে আগেই চিঠি দিয়েছিল শিপিং এজেন্ট। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. আরিফ বলেন, আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর পক্ষে নই। তবে একান্তই বাড়ানোর প্রয়োজন হলে ১০-১২ শতাংশ বাড়ানো যেতে পারে।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর ৩২ লাখ ৯৬ হাজার কনটেইনার এবং ১৩ কোটি মেট্রিক টন কার্গো পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে। আর বছরে বন্দরের নিজস্ব আয়ের পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার বেশি।
এফপি/টিকে