জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি জরুরি: তাহের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপের মধ্যবর্তী চায়ের বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাইয়েদ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এ সময় তিনি জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের আইনি ভিত্তি, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং নারীদের আসন সংক্রান্ত দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, “আজকের আলোচনায় আমরা সাতটি এজেন্ডা পেয়েছি, তবে এখন পর্যন্ত আলোচনা চলছে একটি বিষয়—নারীদের আসন নিয়ে।”

তিনি জানান, এই বিষয়ে জামায়াতসহ সব ইসলামি দল একমত হয়েছে। একটা বড় ধরনের দেশি-বিদেশি প্রপাগান্ডা চালানো হয় যে আমরা নাকি নারীর অধিকার মানি না। অথচ, আমরা ইউরোপ-আমেরিকায় গেলে বা ডেলিগেশন এলে তারা কমনলি যে তিনটা প্রশ্ন তোলে তার মধ্যে একটি নারীর অবস্থান নিয়ে। এবার আমরা একমত হয়েছি যে নারীদের জন্য ১০০টি আসন সংরক্ষণের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী ইন প্রিন্সিপাল একমত।”

তিনি বলেন, “নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন পিআর সিস্টেমে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হওয়া উচিত, এতে নারীরা নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন।”

তবে বর্তমান কিছু প্রস্তাব নিয়ে দলের দ্বিমত রয়েছে বলে জানান তাহের। তার ভাষায়, “যদি ৫% কোটায় ১০টি দল ক্যান্ডিডেট দেয়, তাহলে দেখা যাবে হয়তো নারী জয়ী হলেন না, এমপি হলেন না—তখন নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়বে না। তাই এমন নিরাপদ কাঠামো দরকার যাতে নারীরা নিয়মিত জিতে আসতে পারেন।”

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা অনেক জায়গায় একমত হয়েছি। কিছু রিজার্ভেশন রয়েছে, যা আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আকারে দিয়েছি। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঐকমত্যের ভবিষ্যৎ কী? আমরা বলেছি, এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে আইনি কাঠামো তৈরি করতে হবে, নইলে এই আলোচনার ফলাফল হবে না।”

তিনি বলেন, “কেউ কেউ বলছে, আগামী পার্লামেন্টে গিয়ে আইন হবে। এটা অবাস্তব ও অসামাজিক বক্তব্য। কারণ, পরবর্তী পার্লামেন্ট গঠিত হবে এই সংস্কারের ভিত্তিতে না হলে আবার পুরনো নিয়মে নির্বাচন হবে।”

তিনি বলেন, তারা ইতোমধ্যে প্যানেল অব লইয়ার্সের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং আইনি ভিত্তি তৈরির কয়েকটি বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির এটার লিগ্যাল ভিত্তি আইনি কাঠামো আদেশ (এলএফও) – নির্বাচনের আগেই প্রয়োগযোগ্য, গণভোট এবং প্রোক্লেমেশন–প্রধান উপদেষ্টা তা ঘোষণা করতে পারেন।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় গণভোট ও প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পার্লামেন্টে র‍্যাটিফাই (অনুমোদন করা) করে তা সাংবিধানিক মর্যাদা পেয়েছে। এরশাদের সময়ও একই হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই সরকারের মেয়াদ বা বৈধতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন। কিন্তু ৫ আগস্ট জনগণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে, আর ৮ আগস্ট সরকার গঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট কখনো বলে দেয়নি সরকারের মেয়াদ কতদিন। অতএব, জনগণের অভিপ্রায়ই হচ্ছে সুপ্রিম ল।”

“সবশেষে, আমরা চাই এই সনদ ও প্রোক্লেমেশনকে সাংবিধানিক ঘোষণা হিসেবে প্রকাশ করা হোক। পরবর্তী সংসদে এটি র‍্যাটিফাই হলে কেউ আর আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। এর মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের চূড়ান্ত আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে”।

তাহের বলেন, “আইনি ভিত্তি দেওয়া যাবে না—এটা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য। আমরা তো বলেছি, যদি বর্তমান সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়, তাহলে তারা দিক। যদি না পারে, তাহলে আমরা বিকল্প পথ খুঁজে নেব।”

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে তাহের বলেন, “আমাদের হাতে দুটি কাগজ আছে—একটি হচ্ছে জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি হচ্ছে জুলাই সনদ। সনদ হলো এই সংলাপের আউটকাম। তবে এর খসড়া এখনও অসম্পূর্ণ এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যের বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। আমরা আজ অথবা কালকের মধ্যে এর লিখিত জবাব দেব।”

তিনি আরও বলেন, “এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই সনদকে আইনি মর্যাদা কীভাবে দেওয়া যাবে। আমাদের মতে, যেভাবে অতীতে পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোট ও প্রোক্লেমেশন র‍্যাটিফাই হয়েছে, একইভাবে এই সনদ এবং ঘোষণাপত্রকেও সংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে।”

তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কমিটিতে বর্তমানে ৪৩ শতাংশ সদস্য নারী। তিনি বলেন, “আরপিওতে বলা আছে ৩৩% নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক, কিন্তু আমাদের কাছে এই হার তার চেয়েও বেশি। অথচ যারা নারীর অধিকারের কথা সবচেয়ে বেশি বলেন, তাদের দলে এই হার নেই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চেয়েছি, চূড়ান্ত আলোচনার সময় জাতীয় ঐক্য কমিটির প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হোক, যাতে আমরা সরাসরি তার সঙ্গে পয়েন্টগুলো বিনিময় করতে পারি।”

এমআর/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
১৫ বছর আগের গুজব নিয়ে মুখ খুললেন প্রেস সচিব Aug 01, 2025
img
ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই: সরফত আলী সপু Aug 01, 2025
img
বাণিজ্য উপদেষ্টা নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন: ফাওজুল কবির খান Aug 01, 2025
img
কোন কারণে আদাহ-কে কোল থেকে ফেলে দিলে অক্ষয়! Aug 01, 2025
img
রিয়ালের সঙ্গে ভিনিসিয়ুসের চুক্তি নবায়ন স্থগিত! Aug 01, 2025
img
মৃত্যুহীন দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৩৮ , হাসপাতালে মোট ভর্তি ২১ হাজার ১১৮ জন Aug 01, 2025
img
বেতনের দাবিতে কর্মবিরতি, ১৩০ বাংলাদেশি শ্রমিক ফেরত পাঠালো কুয়েত Aug 01, 2025
img
ফের আইনি বিপাকে কঙ্গনা রনৌত Aug 01, 2025
img
ঐকমত্য কমিশনের ৮২৬টি সুপারিশের মধ্যে ৫১টিতে ভিন্ন মত বিএনপির : সালাহউদ্দিন Aug 01, 2025
মোহনীয় লুকে যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় দীঘি Aug 01, 2025
যেকারনে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি বাড়িয়ে দিলো ভারত Aug 01, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টা ও ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন জামায়াত আমির Aug 01, 2025
img
বাংলাদেশের শুল্ক কমতেই ভারতের পোশাক শেয়ারে বড় ধস Aug 01, 2025
img
উত্তরা বিমান দুর্ঘটনা: শোকবইতে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বাক্ষর Aug 01, 2025
img
স্টোকসের পর এবার ছিটকে গেছেন ক্রিস ওকস Aug 01, 2025
img
অভিষেকের আগেই রিয়াল মাদ্রিদের অনুশীলনে নিষিদ্ধ আর্জেন্টাইন ফুটবলার Aug 01, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রকে যে কৌশলে আটকাতে চাইছে ইরান Aug 01, 2025
img
ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তে আটক ৩ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ Aug 01, 2025
img
প্রতিযোগীদের চেয়ে শুল্কহার কিছুটা কম, এটাই আমাদের জন্য স্বস্তির খবর : বিজিএমইএ সভাপতি Aug 01, 2025
সংসদে 'শ্রমিক প্রতিনিধি' চাইলেন নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী Aug 01, 2025