রুম্মান আহমদ। বয়স মাত্র ২৩। চোখে ছিল ভবিষ্যতের অসংখ্য স্বপ্ন। পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েই বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছিলেন। কিন্তু সবকিছু থেমে গেল মাত্র কয়েক সেকেন্ডের দুর্ঘটনায়।
রুম্মান সিলেট সদর উপজেলার সাহেবের বাজার এলাকার লোসাইন গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদিরের বড় ছেলে। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন পরিবারের ভরসা। ২০২৩ সালে কালাগুল তাওয়াক্কুলিয়া হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসায়।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন রুম্মান। কিন্তু সংসারের একটু সচ্ছলতার জন্য নিজের দায়িত্ববোধ থেকেই কাজে নেমে পড়েন। পরিবার চালাতে গিয়ে পেছনে ফেলে দেন নিজের স্বপ্নগুলোকে। চুক্তিভিত্তিক কাজ শুরু করেন সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইনরাজের অধীনে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে সংগ্রামী এই তরুণের জীবন থেমে যায় এক অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনায়। বিমানবন্দরে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছিলেন তিনি। হঠাৎ একটি বোর্ডিং ব্রিজের ভারী চাকা বিস্ফোরিত হয়ে এসে সজোরে আঘাত করে তার ও সহকর্মী এনামুল হকের ওপর। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রুম্মানকে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই চারদিকে নেমে আসে শোকের ছায়া।
রুম্মানের চাচা আলতাফ হোসেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ও শুধু নিজের কথা ভাবেনি, সবার কথা ভাবত। আমিও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজ করি। আমার পরিচিতির সুবাধে এখানে তার নিয়োগ হয়। সংসার চালাতে সে খুব কষ্ট করত। এখন আর কিছুই করার নেই। শুধু অপেক্ষা ওর জানাজা পড়ার।’
সাহেবের বাজার এলাকার স্থানীয় সাংবাদিক মতিউর রহমান জানান, রুম্মান খুবই ভদ্র ও শান্ত ছেলে ছিল। কাজে ছিল মনোযোগী, পরিবার-সমাজে ছিল দায়িত্বশীল। এমন মৃত্যু আমাদের কাঁদায়, তীব্র বেদনার সৃষ্টি করে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন রুম্মানের মরদেহ সিলেট নগরীর মানিক পীর টিলায় গোসল করানোর জন্য আনা হয়, তখন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। গোসল শেষে কফিনবন্দি করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় লোসাইন গ্রামের নিজ বাড়িতে। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
মানিকপীরের টিলায় লাশ দেখে কান্নাজড়িত কন্ঠে রুম্মানের ফুফাতো ভাই পুলিশ সদস্য সুয়েব বলেন, গতকালই আমাদের শেষবার কথা হয়েছিল ফোনে। সে বলেছিল ভাই, কাজ থেকে একটু ছুটি পেলে চল ঘুরতে যাই কোথাও। আমি রাজি হয়েছিলাম। দুজন মিলে ভেবেছিলাম সিলেটের কোথাও ঘুরতে যাব। কিন্তু এখন আর যাওয়া হলো না ভাই, আর কিছুই হলো না।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বাদ জুমা রুম্মানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে লোসাইন গ্রামের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
ইউটি/টিএ