আমেরিকান প্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করছেন। এর পাশেই বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির খেলোয়াড়দের হতাশা। এর মধ্যে একজন হাউমাউ করে কাঁদছেন।
৫৪ কেজি ওজন শ্রেণিতে লড়ছিলেন আনসারের উৎসব আহমেদ। সম্প্রতি তিনি বিদেশে এক আমন্ত্রিত আন্তর্জাতিক বক্সিং প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জিতেছেন। আজ জাতীয় আসরে হেরে গিয়ে একেবারে ভেঙে পড়েন। চেয়ারে বসে কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমি বিদেশে চ্যাম্পিয়ন হই আর দেশে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি না। খেলায় আমি জিতেছি, কিন্তু আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
উৎসবের পাশাপাশি আনসারের আরও কয়েকজন খেলোয়াড় ফলাফলে পক্ষপাত নিয়ে অভিযোগ করেন। আজ এক পর্যায়ে আনসার খেলায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল। নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকারের বড় বোন আফরা খন্দকার আনসারের বক্সার। আমেরিকান প্রবাসী জিনাতের বিপক্ষে সেভাবে লড়াই না করতে পারার পেছনে খেলা নিয়ে দ্বিধান্বিত কোনো কারণ কি না এই প্রশ্নের জবাবে আফরা বলেন, ‘না, আমি সব সময় খেলার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।’
প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার প্রদান পর্ব শুরু হয়। সেখানে পুরুষ ৫৪ কেজিতে রৌপ্য পাওয়া আনসারের উৎসব আহমেদ মঞ্চে যাননি পুরস্কার গ্রহণ করতে। আনসারের বক্সাররা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান পুরোপুরি বর্জন করতে চাইলেও কোচ সেটা করতে দেননি।
বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমএ কুদ্দুস ফলাফল পক্ষপাত করার অভিযোগ খণ্ডিয়ে বলেন, ‘রেফারি-জাজরা নিরপেক্ষভাবেই সব সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। এখানে কোনো পক্ষপাত হয়নি। বিজিত দল/ব্যক্তি এ রকম অভিযোগ তোলেন।’
আনসার দলের পক্ষ থেকে এবং বক্সার উৎসব সাধারণ সম্পাদকের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, ‘উৎসব আমার কাছে আসেনি। তার সাথে কোনো কথাই হয়নি। আনসারকে আমরা বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা সেটি মানছিল না।’
জিনাত ফেরদৌসের আগমন এবারের জাতীয় বক্সিং বেশ আলোচনায় ছিল। তবে শুরু থেকেই অব্যবস্থাপনা দৃশ্যমান হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন হয়েছে একেবারে ছোট্ট কক্ষে যেখানে অনেক সাংবাদিক প্রবেশই করতে পারেননি। গতকাল আসর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটা আজ গড়িয়েছে। এসব ছাপিয়ে ফলাফলে পক্ষপাতের অভিযোগ আয়োজনকে আরেক দফা প্রশ্নের মুখে ঠেলেছে।
জাতীয় বক্সিং প্রতিযোগিতায় দলগতভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বৃহস্পতিবার মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলা শেষে তারা ১৭টি স্বর্ণ, পাঁচটি রুপা ও দুটি ব্রোঞ্জ জিতে সেরা হয়। এর মধ্যে পুরুষ বিভাগে ১২টি স্বর্ন ও ১টি ব্রোঞ্জ এবং মেয়েদের বিভাগে পাঁচটি করে স্বর্ণ ও রুপা এবং একটি ব্রোঞ্জ রয়েছে। রানার্সআপ আনসার জিতেছে ছয়টি স্বর্ণ, ১১টি রুপা ও ২টি ব্রোঞ্জ। পুরুষ বিভাগে একটি স্বর্ণ, ৬টি রুপা ও ২টি ব্রোঞ্জ এবং মেয়েদের বিভাগে ৫টি করে স্বর্ণ ও রুপা রয়েছে। খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব উল আলম। এ সময় বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এম এ লতিফ খান, সাধারণ সম্পাদক এমএ কুদ্দুস খান এবং পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান জজ ভূঁইয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফায়জুর রহমান ভূঁইয়া ছিলেন।
ইউটি/টিএ