যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক কমায় নতুন বাজার সুবিধা পেল বাংলাদেশ, তবে রয়ে গেছে কিছু চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ভারতের পণ্যে বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের জন্য শুল্ক হার ১৯ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে এই ১৫ শতাংশ শুল্ক কমার বিষয়টিকে ‘মহাবিপদ সুযোগে পরিণত হয়েছে’ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে চামড়া শিল্প, সব খাতের বাজার বিস্তৃত করার এটাই সুযোগ। কারণ ভারতের জন্য শুল্ক হার বেশি হওয়ার ফলে বায়াররা গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে সে দেশে বাণিজ্য করতে বেশি আগ্রহী হবে না।

আর পাকিস্তানের জন্য শুল্ক হার ১৯ শতাংশ হলেও এক শতাংশের সুবিধা পাওয়ার জন্য বায়াররা পাকিস্তানে যাবে না। কারণ পাকিস্তানের সেই সরবরাহ ক্যাপাসিটি নেই। পোশাক শিল্প প্রমাণিত শিল্প। এই এক শতাংশের জন্য বাংলাদেশের মতো নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী বাদ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানের কাছে যাবে বলে মনে হয় না।

সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, গ্যাসের অভাবে ফ্যাক্টরি চলে না। উৎপাদনে দেরি হলে সময় মতো অর্ডার দেওয়া হয় না। তখন প্রোডাক্ট বিমানে পাঠাতে হয় বা ডিসকাউন্ট দিতে হয়। আবার দেখা যায়, বন্দর থেকে মালামাল জাহাজে ওঠাতে এক সপ্তাহ লেগে যায়। এনবিআর থেকে ডকুমেন্টস ক্লিয়ার হয় না। বন্দরের অদক্ষতার কারণেও অনেকসময় গতি মন্থর হয়।

গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে যে প্রায়ই রাস্তাঘাট বন্ধ করে অবরোধ করা হয়, সে বিষয়টির কথাও বলেন তিনি। তার মতে, এসব ঘটনা ‘সরবরাহ চেইনকে বিঘ্নিত করছে।’

এ ছাড়া, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষও বড় একটি বাধা বলে মনে করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বদনাম আছে যে বাংলাদেশ ন্যুনতম মজুরি দিয়ে কাজ করানো হয়। এই ইমেজটা কাটাতে হবে। কারণ ইউরোপিয়ান মার্কেটের কনজিউমাররা সেন্সিটিভ। তারা অনেকসময় বলে যে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দেখলে পণ্য কিনো না।

তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখলে ফ্যাক্টরি চলবে না এবং শ্রমিক অসন্তোষের সুযোগ অনেকেই নেয়। কারণ, বাংলাদেশকে অস্থির করতে পারলে বায়াররা বাংলাদেশ থেকে অন্য কোথাও চলে যাবে।

নতুন এই শুল্ক নীতি নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই বলেছেন, যারা আমেরিকান পণ্যের ওপর অসম শুল্ক আরোপ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে। অর্থাৎ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোই তার মূল উদ্দেশ্য।

আর বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে গিয়েই বিভিন্ন দেশ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বা দিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াবে। যুক্তরাষ্ট্রও দেশভেদে নানা রকম শর্ত দিয়েছে।

বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশটি থেকে আমদানি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে গম ও তুলা আমদানি এবং ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।

তবে চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা কমিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তা কেনার শর্ত ছিল। এ ধরনের স্পর্শকাতর শর্তের ব্যাপারে শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কী অবস্থান নিয়েছে, চুক্তিতে কী রাখা হয়েছে- তাএখনো স্পষ্ট করা হয়নি।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলছিলেন, ‘অন্য দেশগুলোও এমন প্রস্তাব দিয়েছে যে, এটা আমদানি বাড়াবো, এটা কিনবো। আমরাও তাই করেছি। যদিও আমরা সব বিস্তারিত জানি না। কিন্তু সামগ্রিকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো বলে মনে হয় না। কতটা লাভ হবে, সেটা প্রশ্ন।’

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া সব পণ্যের ওপর আগে থেকেই গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। এখন এর সঙ্গে পাল্টা ২০ শতাংশ যুক্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে দিতে হবে মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন সেটি হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে বড় অংকের অর্থাৎ মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

এফপি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img

চাকসু নির্বাচন ২০২৫

সোহরাওয়ার্দী হলের ফল ঘোষণা Oct 16, 2025
img
চাকসু নির্বাচন: শহীদ আবদুর রব হলের ফল ঘোষণা Oct 16, 2025
img

চাকসু নির্বাচন ২০২৫

অতীশ দীপঙ্কর হলের ফল ঘোষণা Oct 16, 2025
img
চাকসু নির্বাচন: মাস্টার দা সূর্য সেন হলের ফল ঘোষণা Oct 16, 2025
img

চাকসু নির্বাচন ২০২৫

চাকসুর ফল কারচুপির অভিযোগে শাহবাগে ছাত্রদলের অবস্থান Oct 16, 2025
img
গাড়িতে আক্রমণের ঘটনায় নাইমের ফেসবুকে পোস্ট Oct 16, 2025
img
হাসপাতালে পৌঁছেছেন বেগম খালেদা জিয়া Oct 16, 2025
img
শ্রীলঙ্কার ভিসা পেতে এখন অনুমতি লাগবে বাংলাদেশিদের Oct 16, 2025
img

চাকসু নির্বাচন ২০২৫

মুখোমুখি ছাত্রদল ও শিবির : পুলিশ সুপারের মাথায় আঘাত, বিজিবি মোতায়েন Oct 16, 2025
img
এআই প্রযুক্তির ফাঁদে অক্ষয় ও হৃতিক, মামলা পৌঁছেছে আদালতে Oct 16, 2025
img

চাকসু নির্বাচন ২০২৫

সূর্য সেন হলে ভিপি ও এজিএস পদে এগিয়ে ছাত্রদল, জিএস পদে শিবির Oct 15, 2025
img
যুক্তরাজ্যের মূল্যায়নে নিরাপত্তার দিক দিয়ে দেশসেরা সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর Oct 15, 2025
রিপন মিয়াকে নিয়ে চমকের ফেসবুক পোস্ট নেট দুনিয়ায় তোলপাড় Oct 15, 2025
নভেম্বরে গণভোট চাইলো জামায়াত Oct 15, 2025
আশা করছি ১৭ অক্টোবর সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে সাক্ষর করবে’ Oct 15, 2025
মাশরাফি সরলেন রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে মন্তব্য ক্রীড়া উপদেষ্টার! Oct 15, 2025
সাংবাদিককে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য চবি ছাত্রদলের এজিএস প্রার্থীর! Oct 15, 2025
মিরপুরের কেমিক্যাল ভবনে আগুন, আরও ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে Oct 15, 2025
নির্বাচনের আগে কতটা চাপে ছাত্রশিবির প্যানেল? Oct 15, 2025
img
কেবিসির হট সিটে অমিতাভের মুখোমুখি দিলজিৎ, পুরস্কারমূল্য যাবে বন্যার্তদের সেবায় Oct 15, 2025