আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, এ বিচার অতীতের হিসাব মেটানো নয়। এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনস্থাপনের একটি প্রক্রিয়া। বিচার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনে পরিচালিত হবে।
রোববার (৩ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে জুলাই আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তাজুল বলেন, ‘দুজন আসামির (শেখ হাসিনা ও কামাল) অনুপস্থিতে বিচার, কোনোভাবেই অপরাধীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য বাধা হতে পারে না। আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচার হওয়া মানেই ন্যায় বিচার বঞ্চিত হওয়া নয়।’
কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় মন্তব্য করে তাজুল বলেন, ‘যাতে দোষীদের সঠিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয় এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা হয় এবং গোট বিশ্বকে বার্তা দেয়া হয়, অপরাধী যত বড়ই হোক, তার জন্য বিন্দুমাত্র ছাড় নেই।’
এর আগে সূচনা বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ইতিহাসের নির্মম হত্যাযজ্ঞের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। তবে আমরা সে শাস্তি চাই আইনি পরিকাঠামোয়। যে উপাদান প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনবে সেগুলো বিশ্লেষণ করে এবং সাক্ষ্য শুনে আগামী প্রজন্মের জন্য ন্যায়বিচার চাই।’
তিনি বলেন, ‘বিগত আমলে গুম খুনের পলিটিকাল কালচার সৃষ্টি হয়েছিলো। বাংলাদেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এমন একটি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা দরকার, যেখানে খুনের রাজনীতি বন্ধ হবে।’
‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে গুম খুন চাঁদাবাজি, টাকা পাচার করা হয়েছে। আর এর বিরুদ্ধেই ছিল বৈষম্যবিরোধী জুলাই আন্দোলন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘স্বৈরাচারদের সমিতি করা হলে, শেখ হাসিনা এই সমিতির সভাপতি হতে পারেন। আর মিথ্যার পিএইচডি করা জন্য হিটলারও হয়তো শেখ হাসিনার কাছে আসতো।’
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও আসামি। এই মামলায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি হলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। এখন তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।
গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে এ মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ঠিক করা হয়। মামলায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও জাতীয় দৈনিকের এক সম্পাদকসহ ৮১ জন।
শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় দেড় হাজার মানুষকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশদান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট ৫ অভিযোগ আনা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া-সংক্রান্ত শেখ হাসিনার অডিও রেকর্ড এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন।
এরপর প্রসিকিউশন বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই, আমরা অপরাধের বিরুদ্ধে এসেছি। আমরা ন্যায় বিচার চাই। দেশের মানুষের স্বপ্নের বিচার চাই। আমরা ন্যায় বিচার চাইবো, ন্যায় বিচারের মধ্য দিয়েই আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাইবো।’
এফপি/ টিকে