ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য ট্রাম্পের সময়সীমা শেষ হওয়ার কয়েকদিন আগে বুধবার ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আলোচনার পর ক্রেমলিন একটি অস্পষ্ট বিবৃতি জারি করেছে।
রুশ পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, তিন ঘণ্টাব্যাপী ওই আলোচনায় পুতিন ‘ইউক্রেন প্রশ্নে’ কিছু ‘সংকেত’ যুক্তরাষ্ট্রের দিকে পাঠান ও একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও ‘উত্তর সংকেত’ গ্রহণ করেন।
উশাকভ বলেন, ‘মার্কিন পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিস্তারিত জানানো হলে আলোচনার আরো তথ্য প্রকাশ করা হবে।’
এর আগে ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করা দেশগুলোর ওপরও দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
এ আলোচনার পর প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বৈঠকের আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করে বলেন, ‘শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে চাপে পড়লেই রাশিয়া শান্তির পথে অগ্রসর হতে পারে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞা ও রুশ তেল কিনে এমন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের কঠোর হুমকিকে স্বাগত জানান।
রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, পুতিন ও উইটকফ একটি সোনালি সজ্জিত হলে হাসিমুখে হাত মেলাচ্ছেন।এর আগেও তাদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হয়েছে।
তবে শুক্রবারের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে কোনো সমাধান আসার প্রত্যাশা খুবই কম, কারণ ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার হুমকি সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো ইউক্রেনের ওপর বড় পরিসরের বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি একদিনেই এই যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি সে প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন ও বিষয়টি নিয়ে দিন দিন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।
গত মাসে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা অনেকবার ভেবেছিলাম যুদ্ধ থেমে যাচ্ছে, কিন্তু তারপর প্রেসিডেন্ট পুতিন কিয়েভের মতো শহরে রকেট ছুড়ে নার্সিং হোমে মানুষ হত্যা করছেন।’
ইস্তানবুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তিন দফা আলোচনাও যুদ্ধ বন্ধের কাছাকাছি কিছু আনতে পারেনি। পূর্ণ হামলা শুরুর সাড়ে তিন বছর পরও মস্কোর সামরিক ও রাজনৈতিক শর্তাবলি কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। ক্রেমলিন একাধিকবার জেলেনস্কি-পুতিন সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে মঙ্গলবার জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের ফোনালাপের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আরো ২০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা অনুমোদন করেছে, এ সময় ড্রোন উৎপাদন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার তেল শোধনাগার ও বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের শহরগুলোতে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
দ্য কিয়েভ সিটি মিলিটারি অ্যাডমিন্সট্রেশন জানিয়েছে, গত সপ্তাহে কিয়েভে চালানো এক হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। এটি ছিল ইউক্রেনের রাজধানীতে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
ইউক্রেন বুধবার জানিয়েছে, রাশিয়ার একটি হামলায় জাপোরিঝিয়ায় একটি ছুটির ক্যাম্পে দুজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এ হামলার কোনো সামরিক যুক্তি নেই। এটির উদ্দেশ্য শুধুই নৃশংসতা, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা।’
এফপি/ টিএ