জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি: ছাত্রশিবির

গত ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’ জনআকাঙ্ক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটেনি বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। 

 বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান ছিল একটি দীর্ঘ সংগ্রামের অনিবার্য পরিণতি, যেখানে ছাত্র-জনতার বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগে ফ্যাসিস্ট শাসনের পতন ঘটে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ দাবি ছিল, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন এবং তার পূর্ণ বাস্তবায়ন। দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষার পর সরকারের জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণায় আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম এই ভেবে যে, এতে জনগণের আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ঘোষণাপত্রে জনদাবির বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে।"

প্রস্তাবিত জুলাই ঘোষণাপত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ উপেক্ষিত হয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, তা হলো—
১. ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ শাসন, জমিদারপ্রথার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও ভারতভাগের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। 

২. ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর হত্যাকাণ্ড, যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ১/১১ সৃষ্টি করে। আরও উপেক্ষিত হয়েছে পরবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া পিলখানা ট্রাজেডি, ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে মব সংস্কৃতি, শাপলা গণহত্যা, আল্লামা সাঈদীর রায়-পরবর্তী সারা দেশে গণহত্যার ঘটনা। শুধু তাই নয়; পুরো ঘোষণাপত্রে 'গণহত্যা' শব্দটিই অনুপস্থিত।

৩. জুলাই অভ্যুত্থানে আলেমসমাজ, চিকিৎসক, রেমিটেন্স যোদ্ধা, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার ও গণমাধ্যম কর্মীসহ গুরুত্বপূর্ণ পেশার ঐতিহাসিক ভূমিকা স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।

৪. জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিত্বকারী সকল পক্ষের (সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, স্কুল, কলেজ, ইংলিশ মিডিয়াম, আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা) সুনির্দিষ্ট স্বীকৃতি উল্লেখ নেই। 

৫. বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চরম দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংসসাধন সামাজিক-রাজনৈতিক অধিকার হরণের মতো গুরুতর ঘটনা ঘোষণাপত্রে সুনির্দিষ্টভাবে স্থান পায়নি।

৬. অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ইন্টেরিম সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও ইন্টেরিম সরকারের মেয়াদেই ফ্যাসিবাদী আমলের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কারের অপরিহার্যতাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

৭. জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের জাতীয় বীর বলা হলেও বিশেষ পদক বা উপাধিতে ভূষিত করার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নেই। পাশাপাশি অভ্যুত্থানে শহীদ, আহত, পঙ্গুত্ববরণকারী ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের অঙ্গীকারনামা অনুপস্থিত। 

৮. জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনের পরিকল্পিত রোডম্যাপ তৈরির ধারা হিসেবে ৯ দফা তৈরি এবং একে সরকার পতনের ১ দফার রূপান্তরের স্বীকৃতি উল্লেখ নেই। ঘোষণাপত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না থাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের প্রকৃত ইতিহাস অস্পষ্ট থেকে যাবে। 

৯. বিগত ১৬ বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির নয়া স্বরূপ নিয়ে নির্দিষ্ট পন্থা উল্লেখ করা হয়নি। 

১০. একদলীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সংবিধানে অগণতান্ত্রিক পরিবর্তনসমূহ বাতিল এবং গণআকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে সংবিধান সংশোধন করার কথা উল্লেখ করা হয়নি। 
১১. জুলাই ঘোষণাপত্রের কোনো আইনগত ভিত্তি না দিয়ে 'পরবর্তী নির্বাচনে সংশোধিত সংবিধানের তফসিলে' সন্নিবেশিত করার কথা বলা হয়েছে, যা অনিশ্চিত।

নেতৃবৃন্দ বলেন, “আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের চেতনা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই অবিলম্বে ঘোষণাপত্র সংশোধন করে প্রতিটি সংস্কার প্রক্রিয়ার ফ্রেমওয়ার্ক ও রোডম্যাপ প্রদান করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রের আলোকে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি ও তা সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে হবে, যাতে জনগণের ন্যায্য দাবি ও শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা নিশ্চিত হয়।”


ইউটি/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইরানের হুমকিতে অনিশ্চিত ট্রাম্পের করিডোর পরিকল্পনা Aug 10, 2025
img
জরুরি বৈঠকে বসছে আরব লীগ ও জাতিসংঘ Aug 10, 2025
img
৪ কোটি ইউরোতে পিএসজির নতুন ফরাসি গোলরক্ষক Aug 10, 2025
img
নির্বাচনের জন্য ৪০ হাজার বডিক্যামেরা সংগ্রহ করবে সরকার Aug 10, 2025
img
দাখিল পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণে ফেল থেকে পাস ৯৯১ শিক্ষার্থী Aug 10, 2025
img
জনস্বার্থ বিবেচনায় অবসরে পাঠানো হচ্ছে পুলিশের ৯ পরিদর্শককে Aug 10, 2025
img
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার Aug 10, 2025
img
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ Aug 10, 2025
img
আমেরিকার সাগর পাড়ে ছোট ছেলে বীরকে নিয়ে ঘুরছেন শাকিব খান Aug 10, 2025
img
লিভারপুল ছেড়ে আল হিলালে নুনেজ Aug 10, 2025
img
গাজায় ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল আরও ৪৭ ফিলিস্তিনির Aug 10, 2025
img
বিপিএল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এবার বিসিবিকে বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে Aug 10, 2025
img
প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সোমবার মালয়েশিয়া যাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সই হতে পারে ৫ সমঝোতা স্মারক Aug 10, 2025
img
গোলাপি গাউনে রোজাকে ‘বার্বি ডলে’র সঙ্গে তুলনা করছে ভক্তরা Aug 10, 2025
img
শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারত থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া আসেনি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Aug 10, 2025
img
ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু আজ Aug 10, 2025
img
নিউ মার্কেট এলাকা থেকে অস্ত্র ভাড়া ও ফ্রি হোম ডেলিভারির চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ Aug 10, 2025
img
ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক বদলে যেতে পারে বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ Aug 10, 2025
img
ফিলিস্তিনি পেলে’র মৃত্যুতে উয়েফার বার্তা, যে প্রশ্ন তুললেন সালাহ Aug 10, 2025
img
দেশে কত দামে স্বর্ণ ও রুপা বিক্রি হচ্ছে আজ? Aug 10, 2025