চীন ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ বিরোধে আন্তর্জাতিক বায়াররা আবারও বাংলাদেশমুখী হওয়ায় বছরে অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় বাড়াতে মরিয়া গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা।
ভারতের নিটওয়্যার অর্ডার যেমন বাংলাদেশে আসার সুযোগ হয়েছে, তেমনি চীন থেকে আসছে ফ্রি অব কস্টের (এফওসি) অর্ডার। এক্ষেত্রে শুল্কায়নের মতো বিদ্যমান জটিলতাগুলো দ্রুত নিরসনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)।
বাংলাদেশের ছোট-বড় সাড়ে চার হাজার গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৩০০ কারখানা মার্কিন বায়ারের কাজ করছে। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বড় ৩০০ প্রতিষ্ঠান সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি করে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ জটিলতায় এসব কারখানায় উৎপাদনে ধীর গতি নেমে আসলেও এখন তা কেটে গেছে। বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, ‘১ হাজার ৩০০ কারখানার মধ্যে প্রায় ৩০০টি পুরোপুরি রফতানিমুখী। এসব কারখানার এখন ভালো সুযোগ আছে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীন ও ভারতের ট্যারিফ বিরোধ যেন বাংলাদেশের জন্য আশার আলো। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মার্কিন ট্যারিফ ২০ শতাংশ হলেও ভারতের জন্য তা ৫০ শতাংশ। আবার চীনের জন্য তা ১০০ শতাংশের বেশি।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান এস এম আবু তৈয়ব বলেন, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে বন্দর সেবার মান উন্নত করতে হবে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জটিলতা দূর করতে হবে। পাশাপাশি পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রা সহজ করতে সরকারকে অবশ্যই নীতিগত সহায়তা দিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি তৈরি পোশাক রফতানি করে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, বর্তমানে চীন ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্য যুদ্ধকে কাজে লাগাতে পারলে এক মৌসুমেই অন্তত ৩ বিলিয়ন এবং পুরো বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তি আয় করা সম্ভব।
এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ প্রতিবছর ২০ থেকে ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিটওয়্যার এবং ১৭ থেকে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওভেন পণ্য রফতানি করে। এর মধ্যে কিছু নিটওয়্যার পণ্যের ক্রেতা আগে বাংলাদেশের পরিবর্তে ভারতের দিকে ঝুঁকলেও, এখন তারা পুনরায় বাংলাদেশমুখী হচ্ছেন বলে দাবি গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের।
বিজিএমইএর পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, বায়ারদের বাংলাদেশে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো চিহ্নিত করে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে ব্যবসায়ীদের।
অন্যদিকে, এফওসি এবং শুল্কায়নসহ বিদ্যমান জটিলতা নিরসনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিজিএমইএর পরিচালক এমডি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, এটি সম্ভব হলে আরও ৮ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করা যাবে।
উল্লেখ্য, ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৯ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৩৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এফপি/টিএ