ক্রিকেট বোর্ডের অবহেলা এবং বৈষম্যের দিকে ইঙ্গিত করে এর আগেও অনেকবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন নারী ক্রিকেটার রুমানা আক্তার। এবার তার সঙ্গে যোগ দিলেন খোদ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানাও। আজ (৮ আগস্ট) নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে নারী ক্রিকেটারদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন এই দুই ক্রিকেটার।
ফেসবুক পোস্টের শুরুতে নারী ক্রিকেটের প্রতি সংশ্লিষ্টদের অবহেলার প্রসঙ্গ তোলেন রুমানা। তিনি লেখেন, ‘বৈষম্য, বৈষম্য আর বৈষম্য। যেখানে ক্রিকেটে উন্নত দেশগুলো তাদের নারী ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আমরা নারী ক্রিকেটারদের কোনো প্রকার আলোচনাতেও আনছি না। আমাদের বৈষম্যটা কেন? আমরাও তো এ দেশের ক্রিকেটে গৌরব বয়ে আনছি। বহির্বিশ্বে যেখানে নারীরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যেমন-মেয়েদের আইপিএল, বিগব্যাশ এবং পিএসএল….খেলে, সেখানে আমরা এটা (মেয়েদের বিপিএল) নিয়ে আলোচনা করতে করতে থেমে যাই। বারবার একইভাবে পরের বছর বলে বলেই থেমে যায়। যদিও আমাদের ছেলেদের বিপিএল এখনো দাঁড়াতে পারিনি। কিন্তু এই দায়ভার কার?'
ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর দিকেও নারী ক্রিকেটারদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন রুমানা। এই সংগঠনের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে পুরুষ ক্রিকেটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা গেলেও নারীরা না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, নারী ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোশকদেরও এর জন্য দায়ী করেছেন ১৩৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এই অলরাউন্ডার।
নিজের পোস্টের শেষ অংশে রুমানা লেখেন, ‘সম্প্রতি বোর্ডে কোয়াব নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এখানে পুরুষ ক্রিকেটারের অনেক আনাগোনা দেখলেও কোনো নারী ক্রিকেটারের দেখা মিলল না। তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায়? যাদের হাত ধরে এই নারী ক্রিকেট তারাইবা কোথায় এখন? তামিম-সাকিব-মাহমুদুল্লাহ যদি সবার আলোচনাতে থাকে, সালমা-রুমানা-জাহানারাদের নিয়ে কোথায় আলোচনা? কবে আমরা নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করব? কবে একটা সুন্দর সংস্কৃতি তৈরি করব? এত বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এটুকু মূল্যবোধ তো আশা করতেই পারি।’
রুমানার বিষ্ফোরক পোস্টের দুই ঘণ্টা আগে রহস্যময় একটি পোস্ট করেন টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার সুলতানা। তার পোস্টে সরাসরি কোনো বিষয়ের উল্লেখ না থাকলেও বৈষম্যের দিকে ইঙ্গিত স্পষ্ট। ফেসবুকে নিগার লেখেন, ‘ক্রিকেটার আর নারী ক্রিকেটারের ভেতর পার্থক্য আছে বন্ধু।’
নিগার-রুমানার উদ্বেগ নারী ক্রিকেটারদের প্রতি হওয়া বৈষম্য নিয়ে হলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনকার বিষ্ফোরণ মূলত কোয়াবের কোনো কার্যক্রমে নারী ক্রিকেটারদের অন্তর্ভূক্ত না রাখা। গত দুই মাসে কয়েকবার কোয়াবের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো নারী ক্রিকেটার ছিলেন না। এই বিষয়টিই হয়তো ইঙ্গিত করেছেন নারী ক্রিকেটাররা।
নারী ক্রিকেটারদের বাদ দিয়েই কেন কোয়াবের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে সংগঠনটির আহবায়ক সেলিম শাহেদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'সবাইকে কমন ইনফরমেশন দেওয়া হয়েছে, যে আসার সে এসেছে। যে আসেনি, সে আসেনি। কাউকে তো জোর করার কিছু নাই।’
সভার আগে নারী ক্রিকেটারদের আলাদাভাবে জানানো হয়েছিল কিনা, এমন প্রশ্নে অবশ্য কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সেলিম। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে হাবিবুল বাশার সুমন বলতে পারবে। নারী ক্রিকেটটা তো আগে সে দেখতো বিসিবির। নারীদের ব্যাপারে উনার সাথে কথা বলতে পারেন। আর যারা মেম্বার হতে চায়, তারা তো মেম্বার হতে পারবে। তাদের যে গাইডলাইন আছে সেটার মাধ্যমে।’
এমকে/টিকে