বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে, কিন্তু স্বৈরাচারের পায়ের ছাপ রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৭ বছরের অত্যাচারের পরও বিএনপির কোনো নেতাকর্মী দল ছাড়েনি। কর্মীরা না খেয়ে থেকেছেন, ঘরের টিন বিক্রি করে সংসার চালিয়েছেন, কিন্তু দল ভাঙা যায়নি।
সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে নওগাঁ জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
টুকু বলেন, একটি দল আমাদের সম্পর্কে নানা রকমের কুৎসা রটাচ্ছে। আমি সেই দলকে বলতে চাই, বিএনপির মানুষ চাঁদাবাজি করে না কিন্তু আপনারা হাদিয়া নেন। সেইটা কিন্তু বলেন না, আপনারা একটু বলবেন হাদিয়া নেওয়া যৌক্তিক আছে কিনা। এই দলটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পরিবর্তন করতে চায়। তারা বলতে চায়, ভুল বোঝাবুঝির জন্য নাকি দেশভাগ হয়ে গেছে। ভুল বোঝাবুঝির জন্য দেশভাগ হয় নাই। আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান সাহেবের লেখাতে প্রকাশ পেয়েছে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কি ব্যবহার করতো। কিন্তু এই ইতিহাস পরিবর্তন করতে যেয়ে ৫ ই আগস্ট জুলাই আন্দোলনকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বললে আমরা তা মানবো না। স্বাধীনতা একবার হয়, একটা দেশের জন্ম একবার হয়, সেই জন্মের সঙ্গে সঙ্গে একটা পতাকা পায় এবং একটা স্বাধীন ভূখণ্ড পায়। এই সব কিছুর নেতৃত্ব দিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা হয়ত এই সমাজের ফুরিয়ে যাওয়া লোক কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবো। ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানিরা হামলা করার পরে আওয়ামী লীগ যখন পালিয়ে চলে গিয়েছিল, যাদের উপর দেশের মানুষ আশা রেখেছিল, যাদেরকে ভোট দিয়েছিলো কিন্তু তারাই পালিয়ে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমানের বক্তব্যের সাক্ষী আমি। আমি নরসিংদীর একটি গ্রামে ছিলাম সেই গ্রামের চায়ের স্টল থেকে একজন এসে বললো এক মেজর স্বাধীনতা ঘোষণা করছে। তখন ওখানে যারা ছিল প্রত্যেকটা লোকের মধ্যে যেন বিদ্যুৎ চলে গেছে। তারা বলল বাংলাদেশের সৈন্যবাহিনী নেমে গেছে, আমাদের ভয় নাই, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ হবে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে।
তিনি আরও বলেন, আজকে আপনারা যে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন, যে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করার জন্য আলবদর আল শামস বাহিনী বানিয়ে রেখেছিলেন আর আপনারা বড়ো বড়ো বক্তব্য দেবেন বিএনপির বিরুদ্ধে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। রাজনীতির লাইসেন্স জিয়াউর রহমান সাহেব দিয়েছিল কাজেই জিয়াউর রহমানের দলের দিকে আঙুল তুলবেন না। আমরা সকলেই আল্লাহকে বিশ্বাস করি। কোন মুসলমান যদি তার হৃদয় আল্লাহর কালামকে রাখে তাহলে তার জন্য কোন এজেন্টের প্রয়োজন নাই। সুতরাং আল্লাহর নাম বেচে ভোট চেয়ে লাভ নাই, আমাদেরকে নতুন করে মুসলমান করতে হবে না।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব প্রথম দিনেই বলেছিলেন এবারের নির্বাচন সহজ কিছু হবে না। আমি সিরাজগঞ্জের ভাষায় আপনাদেরকে একটা কথা বলি ‘কোচের ছুরি কোচ কাটে’ কোচটা কী? কোমরের লুঙ্গির মধ্যে ছুরি রাখলে সেই ছুরি দিয়ে নিজের পেট কাটার সম্ভাবনা রয়েছে। ওরা তো এতদিন আমাদের কোচের ছুরি ছিল তাই এখন আমাদের পেট কাটার চেষ্টা করছে। সুতরাং সাবধান হবেন। আওয়ামী লীগ আমরা চিনি, তারা আমাদের শত্রু। কিন্তু কোচের যেটা আছে ওইটা কিন্তু চেনা যায় না। কাজেই আপনাদেরকে সতর্ক হতে হবে।
এ সময় নওগাঁ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক এস এম রেজাউল ইসলাম রেজুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে,বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, রাজশাহী বিভাগ বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন এবং বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও দ্বি- বার্ষিক সম্মেলন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক রেজাউল করিম বাদশাসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
পিএ/টিএ