দেশ থেকে বিদেশে হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার হওয়া ১১টি এবং ২০০ কোটি টাকার ১০১টি কেইস চিহ্নিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, যেহেতু টাকা বাইরে চলে গেছে, সেটাতো আর আমার কথায় ফেরত আসবে না। লিগ্যালওয়েতে টাকা চাইতে হবে। পাচারকারীরা বিশ্বের সেরা আইনজীবী নিয়েছে, তাদের কাউন্টার দিতে হলে আমাদেরও সে রকম আইনজীবী লাগবে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে দৃশ্যমান উদ্যোগের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত আমরা কোনো উদ্যোগ দেখতে পাইনি, আগামী ফেব্রুয়ারির আগে এমন কোনো উদ্যোগ আমরা দেখতে পাবো কিনা, জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সব কিছু দৃশ্যমান হবে, হতে সময় লাগে। আমরা ১১টি সেনসেটিভ কেইস চিহ্নিত করেছি।
তিনি বলেন, টাকা পাচার যারা করে এবং যারা সাহায্য করে তারা আমার আপনার চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান। ধরুন আপনি টাকা কেরানীগঞ্জে পাঠাবেন, কিন্তু সেটা পঞ্চগড় ঘুরে সিলেটে যাবে এভাবে লেয়ারিং করে পাচার হয়। বুদ্ধিমান মানুষ ছাড়াত টেরই পাবে না, এরাতো এভাবেই পাচার করেছে। তবে কারা করেছে সেটা চিহ্নিত করা হয়েছে। এটা একটা অগ্রগতি। দ্বিতীয়ত হলো, কোন কোন স্থানে টাকা গেছে সেটাও চিহ্নিত হয়েছে। তৃতীয় হলো আনার ব্যবস্থা করা।
উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু টাকা বাইরে চলে গেছে, সেটাতো আর আমার কথায় ফেরত আসবে না। লিগ্যালওয়েতে টাকা চাইতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিলেইতো তারা টাকা দিয়ে দেবে এমন বিষয় না। এক ফিলিপাইন থেকে টাকা আনতেই জান বের হয়ে যাচ্ছে, কতো টাকা চলে গেলো। এখানে আমাদের কতোগুলো এমএলএস হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। আবার এমএলএস মানে শুধু একটা অনুরোধ না। এখানে অনেক ধরনের ফরম পূরণ করতে হয়। লন্ডনে এক ভদ্রলোকের দুই তিনটা বাড়ি জব্দ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরে একজন আইনজীবী নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। যেটা বিশ্বের সেরা আইনজীবী। তাদের কাউন্টার করতে হলে আমাদেরও সেরকম আইনজীবী লাগবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যে আইনজীবী আছে তাকে দিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলে টাকাগুলোর কিছুটা ফিরিয়ে আনা যায় কিনা সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। টাকা ফিরিয়ে আনা হবে সেটার থেকেও বড় হচ্ছে সবাইকে একটা সতর্কবাণী দেওয়া যাতে ভবিষ্যতে কেউ করলে পার পাবে না। এখন পরবর্তী সরকার যদি মনে করে এগুলো কিছু করবো, তখন আপনারাই ধরবেন বর্তমানে যে ১১ জন আছে এর সঙ্গে আরো ১২ জন যোগ হবে। এটা একটা ভালো ম্যাসেজ।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা আইএমএফ থেকে ১.৩ মিলিয়ন ডলার আনছি। একজন যে ৪০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে সে টাকাটা ফেরত আনতে পারলেতো আমাকে আইএমএফ এর কাছে যেতে হতো না। কিন্তু সেটা পারছি না। দেশে কিন্তু অনেকের সম্পত্তি ফ্রিজ হয়েছে। দেশেরগুলো সহজ হলেও বাইরেরগুলো আনা একটু কঠিন। শুধু দুবাই, সিঙ্গাপুর না, ট্যাক্সহেভেন বলি যেগুলোকে যেমন বারবাডোজ, অ্যান্টিগুয়া এসব স্থানে গেছে সেটা আমরা টের পেয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে আনতে একটু কঠিন কারণ তাদের নিয়ম কানুন সে রকম।
তিন বলেন, ২০০ কোটি টাকার বেশি ট্রানজেকশন হয়েছে এরকম ১০১টা কেস চিহ্নিত হয়েছে। এরমধ্যে আপনাদের বন্ধু বান্ধবও থাকতে পারে। আর ১১ কেইসে তো হাজার হাজার কোটি টাকা।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
এফপি/এসএন