ছাত্র প্রতিনিধিরা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে দায়ী করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন মিলনায়তনে জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন।
‘২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের একটি সফল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক ওই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সরকারের বিভিন্ন দফতরে প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। পরে তাদের মধ্যে অনেকে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এর দায় উপদেষ্টা পরিষদের, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের। কারণ তিনি কখনও বলেননি, ‘তোমরা দেশের গর্ব, গণঅভ্যুত্থান এনে দিয়েছো—এখন ক্লাসে ফিরে যাও।’ বরং তিনি ছাত্রদের দল করার পরামর্শ দিয়ে মাথায় তুলেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ডিসি-এসপিরা ছাত্র সমন্বয়কদের নাম শুনলে ডেকে এনে পাশে বসাতেন, এমনকি খুশি করতে নিজের চেয়ারও ছেড়ে দিতেন। এভাবে অতিরিক্ত ভক্তি ও তোষামোদের মাধ্যমে ছাত্রদের বিভ্রান্তিতে ফেলা হয়েছে। যদিও তিনি পরিষ্কার করেন, ‘আমি সকল ছাত্রদের কথা বলছি না, যারা এসব করেছে শুধু তাদের কথা বলছি।’
রাশেদ খান বলেন, ‘এখন ছাত্ররা ডিসি ও এসপি দফতরে গিয়ে খবরদারি করছে। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে আমরা এটা আশা করিনি। দেশে যা শুরু হয়েছে, এভাবে দেশ চলতে পারে না।’
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর উপদেষ্টাদের কাছ থেকে জনগণের অনেক আশা ছিল। তারা সম্পদের হিসাব জনসমক্ষে দেননি। সরকারের এক বছরে রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন হয়নি, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বন্ধ হয়নি এবং দৃশ্যমান কোনো সংস্কারও দেখা যায়নি।’
তার অভিযোগ, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার বন্দোবস্ত টিকিয়ে রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পুলিশ, বিভিন্ন দফতর ও সেক্টরে আওয়ামী লীগকে বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফরিদপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও জুলাই-আগস্টে বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ সবাই একত্রে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। ফরিদপুরের মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে রাস্তায় নেমে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের ঝাঁটা দিয়ে বিতাড়িত করেছে। এর ফলেই দেশ একটি গণঅভ্যুত্থান পেয়েছে।’
রাশেদ খান অভিযোগ করেন, ‘শেখ হাসিনা ফরিদপুরে কোনো উন্নয়ন করেননি। উন্নয়ন হয়েছে ব্যক্তির, বিশেষ করে তার বিয়াই সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের। ফরিদপুর-ভাঙ্গা ৩২ কিলোমিটার মহাসড়ক খানাখন্দে ভরা এটাই প্রমাণ করে কী উন্নয়ন হয়েছে।’
সভায় জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মোহাম্মাদ ফরহাদ মিয়া, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. রুবেল শেখ, সহ-অর্থ সম্পাদক শেখ জাহিদ হাসান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি হৃদয় আহমেদ, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি জুয়েল ভান্ডারীসহ প্রতিটি উপজেলা কমিটির নেতারা।
ইউটি/এসএন