২০২৫ সালের এখন পর্যন্ত ইংলিশ ও ফ্রেন্সসহ বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত সেরা ১৬টি পশ্চিমা সিনেমার সংক্ষিপ্ত তালিকা করেছে বিবিস-এর ফিল্ম সমালোচক ক্যারিন জেমস এবং নিকোলাস বারবার। এই তালিকায় আছে ব্যতিক্রমধর্মী হরর ওয়েপনস (Weapons) থেকে শুরু করে এক প্রকার রোমান্টিক কমেডি ম্যাটেরিয়ালিস্টস (Materialists) পর্যন্ত।
১. ওয়েপনস (Weapons)
সিনেমাটি শুরু হয় রাতের দৃশ্য দিয়ে। কোনো নামহীন উপশহরে, যখন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একই শ্রেণির ১৭টি শিশু হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে, নিজেদের বাড়ি ছেড়ে অন্ধকারের দিকে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে বিভ্রান্ত স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে চায়, আসলে কী ঘটেছে এবং কেন।
এই অতিপ্রাকৃত ঘটনার রহস্যের সমাধান যদিও সরল, কিন্তু পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার জ্যাক ক্রেগার এক জটিল ও চমকে দেওয়া উপায়ে তার সমাপ্তি দেখান। গল্পটি বিভিন্ন চরিত্রের চোখে উপস্থাপিত হয়: শিশুদের তিক্ত শিক্ষিকা (জুলিয়া গার্নার), বিপর্যস্ত প্রধান শিক্ষক (বেনেডিক্ট ওয়ং), ক্ষুব্ধ অভিভাবক (জোশ ব্রোলিন), একজন মানসিকভাবে দ্বন্দ্বে থাকা পুলিশ অফিসার (অ্যালডেন এহরেনরেইচ) এবং আরও অনেকে।
ক্রেগার অসাধারণ দক্ষতায় ভয় তৈরি করেন—মৃতপ্রায় নীরবতা, হঠাৎ করে রক্তক্ষয়ী দৃশ্য, অদ্ভুত ও ভয়ানক পরিবেশ এবং অপ্রত্যাশিত রসিকতা—সবই তিনি দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেন। তবে যা সিনেমাটিকে অনন্য করে তোলে, তা হলো সাধারণ আমেরিকান জীবনের রঙিন চিত্র। এটার সমালোচনা করেছেন নিকোলাস বারবার।
২. হায়েস্ট টু লোয়েস্ট (Highest 2 Lowest)
এই উত্তেজনাপূর্ণ ও চিন্তাশীল থ্রিলারটি আকিরা কুরোসাওয়ার ১৯৬৩ সালের হাই টু লো (High and Low) দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও, এটি পুরোপুরি স্পাইক লির নিজস্ব স্টাইলে তৈরি।
ডেনজেল ওয়াশিংটন অভিনয় করেছেন ডেভিড কিং নামের এক সংগীতশিল্প ব্যবসায়ী চরিত্রে, যার কিশোর পুত্রকে অপহরণ করা হয়। কিন্তু পরে জানা যায়, অপহরণকারী ভুল করে কিং-এর সহকারীর (জেফরি রাইট) ছেলেকে নিয়ে গেছে। এখন প্রশ্ন হলো, কিং কি নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে অন্য কারও সন্তানের মুক্তিপণ দেবেন?
এই নৈতিক দ্বন্দ্ব স্পাইক লির চেনা রূপে জীবন্ত হয়ে ওঠে—বর্ণ ও শ্রেণি বৈষম্য তার চলচ্চিত্রের মূল সুর। সিনেমাটি চোখ ধাঁধানো চিত্রায়নে পূর্ণ, কিং-এর ব্রুকলিন পেন্টহাউস থেকে শুরু করে যেটি কালো শিল্পীদের চিত্রকর্মে ভরপুর। সংগীতের বৈচিত্র্য—র্যাপ থেকে সালসা, এমনকি সম্পূর্ণ অর্কেস্ট্রাল সাউন্ডট্র্যাক পর্যন্ত—সিনেমাটিকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। ক্যারিন জেমস সিনেমাটির সমালোচনা করেন।
৩. ব্রিং হার ব্যাক (Bring Her Back)
ড্যানি ও মাইকেল ফিলিপু ২০২২ সালে তাদের ভূতুড়ে সিনেমা টক টু মি (Talk to Me) দিয়ে ইউটিউবার থেকে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালকের রূপান্তর ঘটান। আর তাদের নতুন ছবি ব্রিং হার ব্যাক (Bring Her Back) আগের চেয়েও বেশি প্রশংসনীয়।
এই ছবিতে এক এতিম ভাই-বোনের গল্প বলা হয়েছে, যাদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিলি ব্যারেট ও সোরা ওয়ং। তারা এক দয়ালু—বা সম্ভবত অতিরিক্তই দয়ালু— পালক মায়ের (অভিনয়ে স্যালি হকিন্স) কাছে থাকতে আসে।
এই ছবির মূল আকর্ষণ হলো, ফিলিপু ভাইরা হরর ও মানবিক নাট্যদ্বয়ের প্রতি সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা সস্তা ভয়ের দৃশ্য বা অতিরঞ্জিত মোড়কে না গিয়ে, বাস্তবসম্মত ও আবেগঘন এক গল্প বলেছেন— যেটি জীবন্ত মানুষদের ঘিরে আবর্তিত হয়। শুধু ব্যাপারটা এমন যে, এই গল্পে রয়েছে অশরীরী ভর, মানবভক্ষী জম্বি, আর এক ধরনের থমথমে আতঙ্ক।
ছবিটি একদিকে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ও দারুণভাবে আবেগপ্রবণ, অন্যদিকে এতটাই স্বতন্ত্র যে, এটি প্রমাণ করে ফিলিপু ভাইরা এখনকার সময়ের সেরা হরর নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম।
তালিকায় আরও রয়েছে—
৪. ম্যাটেরিয়ালিস্টস (Materialists)
৫. (দ্য ব্যালাড অব ওয়ালিস আইল্যান্ড) The Ballad of Wallis Island
৬. লারকার (Lurker)
৭. কমপ্যানিয়ন (Companion)
৮. সিনারস (Sinners)
৯. আর্ট ফর এভরিবডি (Art for Everybody)
১০. ওয়্যারফেয়ার (Warfare)
১১. ব্রিং দেম ডাউন (Bring Them Down)
১২. মিজেরিকোর্দিয়া (Misericordia)
১৩. হোলি কাউ (Holy Cow)
১৪. দ্য ফ্রেন্ড (The Friend)
১৫. ওয়ালেস অ্যান্ড গ্রমিট: ভেঞ্জেন্স মোস্ট ফাওল (Wallace & Gromit: Vengeance Most Fowl)
১৬. অন বিকামিং এ গিনিয়া ফাওল (On Becoming a Guinea Fowl)
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে
সূত্র: বিবিসি