মুক্তির পঞ্চাশ বছর পর পার করল বলিউডের ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে আইকনিক ছবি ‘শোলে’, যার বাংলা অর্থ অঙ্গার। রমেশ সিপ্পি পরিচালিত ‘শোলে’ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অর্থাৎ ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পায়।
প্রখ্যাত লেখক জুটি সেলিম-জাভেদের রচনায় রমেশ সিপ্পি পরিচালিত ছবিটিতে অনবদ্য অভিনয় করেছেন ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চন, হেমা মালিনী, জয়া ভাদুড়ি, সঞ্জীব কুমার। এই ছবিতে গব্বর সিং চরিত্রে আমজাদ খানের অভিনয় তাকে দর্শকের মনে স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছে।
২০৪ মিনিটের এই চলচ্চিত্রটি রামগড়ের কাল্পনিক গ্রামে স্থাপিত একটি ক্লাসিক ভালো-মন্দের গল্প, যেখানে দুই ছোটখাটো অপরাধী, জয় এবং বীরু (বচ্চন এবং ধর্মেন্দ্র), ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম আইকনিক খলনায়ক, নির্মম দস্যু গব্বর সিংকে হত্যা করার জন্য একজন প্রাক্তন জেলর, ঠাকুর বলদেব সিং দ্বারা ভাড়া করা হয়।
‘শোলে’ যখন প্রথম মুক্তি পায়, তখন মুম্বাইয়ের ১৫০০ আসনের মিনার্ভা থিয়েটারে নিরবচ্ছিন্নভাবে পাঁচ বছর ধরে চলে। পরে বিবিসি ইন্ডিয়ার একটি অনলাইন জরিপে এটি ‘ফিল্ম অফ দ্য মিলেনিয়াম’ নির্বাচিত হয় এবং ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের একটি জরিপে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়। ছবিতে আরডি বর্মণের করা সঙ্গীতের ক্যাসেট অর্ধ মিলিয়ন রেকর্ড বিক্রি হয়েছিল।
গত ২৭ জুন ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে ইতালির বোলোগনায় ‘ইল সিনেমা রিট্রোভাটো’ উৎসবে। অবাক করা বিসয় হলো- ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে ভার্সনে নির্মাতা রমেশ সিপ্পি হাজির করেন ছবিটির মূল সংস্করণ।
কারণ রমেশ সিপ্পি ছবিটির সমাপ্তি যেভাবে ঘটিয়েছিলেন তা নিয়ে সে সময় সেন্সর বোর্ডের আপত্তি ছিলো। ছবিটির মূল সংস্করণে গব্বর সিং মারা যান, ঠাকুর তাকে কাঁটাযুক্ত জুতা দিয়ে পিষে হত্যা করেন। কিন্তু সেন্সর বোর্ড আপত্তি জানায়। একজন প্রাক্তন পুলিশ অফিসারের আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ধারণাটি তারা অস্বীকার করে। তারা ছবিটির স্টাইলাইজড সহিংসতাকে অতিরিক্ত বলেও মনে করে। জরুরি অবস্থার সময় যখন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার নাগরিক স্বাধীনতা স্থগিত করেছিল, তখন ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে আসার ফলে অস্বাভাবিকভাবে কঠোর সেন্সরশিপের মুখোমুখি হয়েছিল।
সেন্সর বোর্ডকে নানা যুক্তি দিয়ে বোঝাতে ব্যর্থ হওয়ারা পর সিপ্পি ছবির শেষ দৃশ্যের শুটিং পুনরায় করতে বাধ্য হন। অভিনেতা এবং কলাকুশলীদের দক্ষিণ ভারতের রামনগরমের দুর্গম পাহাড়ে ফিরিয়ে আনা হয়, আবারও রামগড়ের কাল্পনিক গ্রামে রূপান্তরিত করা হয়। এভাবেই ছবির নতুন পরিনতির দৃশ্য ধারণ করা হয়। যেখানে গব্বর সিংকে হত্যা না করে বন্দী করা হয়। এরপরই ছবিটি অবশেষে সেন্সর ছাড়পত্র পায়।
এমনকি ছবির কিছু দৃশ্যও কেটে ফেলা হয়েছিল সেন্সরশীপ পাওয়ার জন্য। কিন্তু এবার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারে নির্মাতা হাজির করেন তার সেই আনকাট সংস্করণ যাতে মুছে ফেলা দৃশ্যগুলো তো রয়েছেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেন্সরের আগে ছবিটি যেভাবে শেষ হয়েছিলো সেই অংশটিও! ছবিটি উৎসবের কিংবদন্তি উন্মুক্ত পর্দায় (যা ইউরোপের বৃহত্তম পর্দা) প্রদর্শিত হয়।
তবে মূল সংস্করণটি উপস্থাপন করতে কম বেগ পেতে হয়নি! তিন বছর ধরে ছবিটির সেই মুছে ফেলা অংশটুকু পুনরুদ্ধারের পথটি খুব সহজ ছিল না। মূল ৭০ মিমি প্রিন্টগুলি টিকে ছিল না এবং ক্যামেরার নেগেটিভগুলি মারাত্মকভাবে খারাপ অবস্থায় ছিল। কিন্তু ২০২২ সালে রমেশ সিপ্পির ছেলে শেহজাদ সিপ্পি ছবিটি পুনরুদ্ধারের প্রস্তাব নিয়ে মুম্বাই-ভিত্তিক ফিল্ম হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের কাছে যান।
‘শোলে’ শুধু সফল চলচ্চিত্র নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতির বড় হিস্যা। ঠাকুরের ‘হাত হারানো’, বাসন্তীকে ‘নাচানো’—এসব লোককথার মতো পুনরাবৃত্ত হয়। জয়, বীরু, গব্বরদের অনেক সংলাপ আজও রাজনৈতিক বক্তৃতা, কমেডি শো, বিজ্ঞাপন এমনকি খেলাধুলার মাঠে ব্যবহৃত হয়। একটি চলচ্চিত্রের টিকে থাকার জন্য আর কী লাগে! তাই তো ৫০ পেরিয়েও ‘জ্বলছে’ শোলে (অঙ্গার)।
সূত্র: বিবিসি
এসএন