জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর রিটার্ন অডিটে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। ‘আয়কর রিটার্ন অডিট নির্দেশনা, ২০২৫’ শিরোনামে জারি করা এই গাইডলাইনে করদাতাদের রিটার্ন যাচাই-বাছাই থেকে শুরু করে অডিট পরিচালনা, প্রতিবেদন প্রস্তুত ও নিষ্পত্তির প্রতিটি ধাপ বিস্তারিতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) এনবিআর থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এনবিআর বলছে, নতুন এই নির্দেশনা কার্যকর হলে অডিট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে, রাজস্ব আয় বাড়বে এবং করদাতাদের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘আয়কর আইন, ২০২৩’ এর ১৮০ ও ১৮২ ধারার আলোকে করদাতার দাখিল করা রিটার্নে কোনো অসঙ্গতি বা ঝুঁকি চিহ্নিত হলে অডিটের আওতায় আনা হবে। এর উদ্দেশ্য করফাঁকি প্রতিরোধ, কর সংস্কৃতি উন্নয়ন এবং কর আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
কীভাবে হবে রিটার্ন নির্বাচন
অডিটের জন্য রিটার্ন বাছাই হবে ঝুঁকিভিত্তিক পদ্ধতিতে। এজন্য একটি অটোমেটেড সিস্টেম ব্যবহার করা হবে- যাতে মানবীয় হস্তক্ষেপ কম থাকে।
তবে কাগজে দাখিল করা রিটার্নের ক্ষেত্রে আপাতত র্যান্ডম বাছাই চালু থাকবে। কম্পানি ও অন্যান্য করদাতার রিটার্ন আলাদাভাবে যাচাই করে বোর্ডের অনুমোদনের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে প্রসেসকৃত রিটার্ন বা নতুন করদাতার প্রথম রিটার্ন অডিটে আনা হবে না- যদি না তাতে স্পষ্ট রাজস্ব ক্ষতি দেখা যায়। একই করদাতাকে টানা তিন বছর অডিটে না আনার বিধান রাখা হয়েছে।
তবে লোকসান, শূন্য আয় বা অস্বাভাবিকভাবে কম আয় দেখালে রিটার্ন অডিটে নেওয়া যাবে। এ ছাড়া আগে যাদের কখনও অডিট হয়নি- সেই রিটার্ন থেকে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ বাছাই করার কথা বলা হয়েছে।
অডিটের ধাপ
রিটার্ন নির্বাচনের পর করদাতাকে ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ দেওয়া হবে। ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হলে অডিট থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায়, কর পরিদর্শক মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে প্রমাণ সংগ্রহ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলকে প্রতিবেদন দেবেন।
করদাতা প্রয়োজনে সংশোধিত রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। তিনি তা করলে অডিট নিষ্পত্তি হবে, আর না করলে আইন অনুযায়ী কর নির্ধারণ করা হবে। অগ্রগতির মাসিক প্রতিবেদন বোর্ডে পাঠানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ব্যক্তি করদাতাদের জন্য বিশেষ নজরদারি
ব্যক্তি করদাতার আয়কর রিটার্ন অডিটের সময় বেতনভিত্তিক আয়, ব্যাংক হিসাবের জমা, ভাড়া আয়, কৃষি আয়, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ আয় ও জীবনযাত্রার ব্যয় খুঁটিনাটি যাচাই করা হবে। আয়ের সঙ্গে সম্পদ ও ব্যয়ের সঙ্গতি আছে কিনা, তা বিশেষভাবে দেখা হবে।
কম্পানি করদাতাদের ক্ষেত্রে
কম্পানির ক্ষেত্রে নিরীক্ষিত হিসাব জমা বাধ্যতামূলক। টার্নওভার ও ব্যাংক জমার সঙ্গে ব্যয় মিলে কিনা, অপ্রাসঙ্গিক খরচ দেখানো হয়েছে কিনা, উৎসে কর যথাযথভাবে কাটা হয়েছে কিনা- এসব বিষয় খুঁটিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া নতুন ঋণ বা দেনা যথাযথভাবে প্রদর্শিত হয়েছে কিনা এবং আয়কর আইনের প্রাসঙ্গিক ধারা অনুসরণ করা হয়েছে কিনা, সেটিও অডিটের আওতায় আসবে।
এসএন