প্রতি বছর ১৯ আগস্ট বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব মানবিক দিবস (World Humanitarian Day)। এ দিনটি মানবতার সেবায় নিয়োজিত সব মানুষকে সম্মান জানানোর এবং তাদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি উপলক্ষ। যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংঘাত এবং বিপর্যয়ের সময় ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান, তাদের এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়।
বিশ্ব মানবিক দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানবিকতা কেবল একটি অনুভব নয়, এটি একটি দায়িত্ব। এই দিনে মানুষকে উৎসাহিত করা হয় সহানুভূতিশীল, সহনশীল ও মানবিক হতে।
ইতিহাস
বিশ্ব মানবিক দিবস পালনের পেছনে রয়েছে একটি করুণ ঘটনা। ২০০৩ সালের ১৯ আগস্ট ইরাকের বাগদাদে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এক ভয়াবহ বোমা হামলা হয়। ওই হামলায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত সার্জিও ভিয়েরা দে মেলোসহ ২২ জন জাতিসংঘ কর্মী নিহত হন। এই ট্র্যাজেডির স্মরণে এবং বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তায় নিযুক্ত কর্মীদের স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘ ২০০৮ সালে ১৯ আগস্টকে বিশ্ব মানবিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
তখন থেকেই প্রতি বছর এই দিনে বিশ্বের নানা প্রান্তে মানবিক কার্যক্রম এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য
প্রতি বছর বিশ্ব মানবিক দিবসে একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। ২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য হচ্ছে: Climate Heroes: Humanitarians on the Frontlines of the Climate Crisis (জলবায়ু সংকটে সম্মুখসারির মানবিক যোদ্ধারা)। এ থিমের মাধ্যমে বিশ্বের সেসব সাহসী মানুষকে সম্মান জানানো হচ্ছে যারা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানবিক সহায়তা দিচ্ছেন, ঝুঁকি নিচ্ছেন এবং জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসছেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন ইত্যাদি দুর্যোগে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে বহু মানবিক কর্মী, এনজিও, চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক এবং সাধারণ জনগণও এগিয়ে আসেন বিপদে পড়া মানুষের পাশে। বিশ্ব মানবিক দিবস তাই আমাদের জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
কীভাবে পালন করা যায় এ দিনটি?
>> মানবিক কাজে যুক্ত মানুষদের সম্মান জানানো
>> স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে অংশ নেওয়া
>> দুস্থদের মধ্যে খাদ্য বা পোশাক বিতরণ
>>সামাজিক মাধ্যমে মানবিক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া
>> শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানবিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা
বিশ্ব মানবিক দিবস কেবল একটি দিবস নয়, এটি একটি চেতনার নাম। এমন একটি চেতনা, যা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখার শিক্ষা দেয়। যে সমাজে মানবিকতা বেঁচে থাকে, সে সমাজেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।
আসুন, আজকের দিনে আমরা সবাই মিলে অঙ্গীকার করি—মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখব এবং অন্যের দুঃখে পাশে দাঁড়াব।
এমআর/টিকে