বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যকে সঠিকভাবে পরিচালনা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনীতিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি একজন মেডিকেল ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষ, যেমন হৃদযন্ত্র সুস্থ না থাকলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে, তেমনি অর্থনীতি ভেঙে পড়লে গোটা রাষ্ট্র অসুস্থ হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা জাতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। তাই পেট্রোল পাম্প, ট্যাংকলরি কিংবা যে কোনো খাতের উদ্যোক্তাদের রাষ্ট্র ও জনগণের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৩টায় বরিশাল শহরের জর্ডন রোডের রোজ বার্ড ভবনে বরিশাল বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত হোসেন খান সেন্টুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার স্বপন।
ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, অতীতে স্বৈরাচারী শাসন অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামো ধ্বংস করেছে, জনগণ ও সরকারের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। আগামী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সেই আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। বিএনপি অতীতেও ব্যবসাবান্ধব ছিল এবং গার্মেন্টস খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের নীতি ও উদ্যোগের কারণেই অর্থনীতি টেকসই পথে এগিয়ে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা তারেক রহমানের ৩১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে ৩৬০ ডিগ্রি পরিকল্পনায় কাজ করছি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। সরকার তখন ব্যবসা সহজ করার জন্য ফ্যাসিলিটেটর ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভূমিকা রাখবে, কিন্তু অতিরিক্ত জটিলতা সৃষ্টি করবে না। এখন একটি ব্যবসা শুরু করতে ১৭ ধরনের কাগজপত্র লাগে, যা অযৌক্তিক। এসব জটিলতা দূর করতে হবে।
তিনি জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব খাতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে। অর্থনীতিকে পুনর্বাসন, রেগুলেটেড ও ডিরেগুলেটেড নীতির মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনগণকে আর প্রজা মনে করে শাসন করা হবে না, বরং অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা হবে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন— বাংলাদেশ ট্যাংকলরি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কামরুল, বরিশাল বিভাগীয় পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংকলরি সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত হোসেন খান সেন্টু, সাধারণ সম্পাদক মীর আহসান উদ্দিন পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শওকত আকবর, পটুয়াখালী-বরগুনা শাখার সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি প্রমুখ।
এতে বক্তারা বলেন, ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পাম্প ব্যবসাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা ভাগ বসাতে চায়। ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তুচ্ছ অভিযোগে হয়রানি করেন, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও অযথা চাপ সৃষ্টি করেন। পুলিশ অযথা মামলা দিয়ে হয়রানি করে, লাইসেন্স নবায়নেও পাঁচ-ছয় বছর সময় লাগে। তারা আশা প্রকাশ করেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে ব্যবসায়ীবান্ধব সরকার গঠন করে এসব সমস্যার সমাধান করবে।
তারা আরও বলেন, সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা, অযৌক্তিক জেল-জরিমানা, সড়ক ও জনপথে চাঁদাবাজি- সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ ও মজুরি কমিশন বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, ৮ ঘণ্টা পাম্প বন্ধ রাখলে দেশ অচল হয়ে যাবে, জেট ফুয়েল সরবরাহও বন্ধ হয়ে পড়বে। বর্তমানে দেশে মাত্র ৩০ শতাংশ জ্বালানি উৎপাদন হয়, বাকি ৭০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রিফাইনারি স্থাপন করেছে, বাংলাদেশে এখনো সে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এছাড়া বক্তারা ট্যাংকলরির আয়ু ৩০ বছর বাড়ানোর দাবি জানান। তাদের মতে, ট্যাংকলরি নিয়মিত বাসের মতো চলে না; সপ্তাহে দুই-তিন দিন ব্যবহার হয়, বাকি দিনগুলো অব্যবহৃত থাকে। তাই ব্যবসায়ীদের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে নতুন নীতি গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
পিএ/টিএ