একসময় সংগীতাঙ্গনে দাপুটে বিচরণ ছিল গায়িকা মিলা ইসলামের। অডিও মাধ্যম, স্টেজ শো থেকে শুরু করে সবখানে তিনি সমানতালে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ করে নানা জটিলতায় গেল কয়েক বছরে গানে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। তবে এ বছর ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইনসাফ’ ছবিতে শোনা গেছে মিলার কণ্ঠ।
এখন আবার গানে ব্যস্ত হচ্ছেন এ গায়িকা।
সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেন মিলা। মাঝের সময়টা সেভাবে দেখা না গেলেও গায়িকা জানান, কখনো দীর্ঘ বিরতি তিনি নেননি। আর বিরতি তেমন প্রভাব ফেলেনি তার সংগীত জীবনে।
কারণ তিনি কখনো জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটেননি। মিলা বলেন, ‘আমি কখনো জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটিনি। গান আমার ভালোবাসার জায়গা। গানের প্রতি আমার ভালোবাসা দেখিয়েছি, তারপর শ্রোতারা ভালোবাসা দিয়েছেন।
ভালোবাসা হারিয়ে যায় না কখনো।’
সংগীতাঙ্গনের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে মিলা বলেন, ‘গত ১০ বছর বা গত ৫ বছরের কথাই যদি মনে করি, আমি অনেক কনসার্ট করেছি দেশের ভেতর এবং দেশের বাইরেও। সংগীতের পরিবেশ হয়তো একটু বদলেছে, এটি স্বাভাবিক, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলায়। শ্রোতার আবেগ বদলায়নি। আগে হয়তো গান ছড়িয়ে যেত অডিও ক্যাসেট, রেডিও বা টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে, এখন সোশ্যাল মিডিয়া আর ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে মুহূর্তেই পৌঁছে যায়।
আমার কাছে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো, এখন শ্রোতা তাদের প্রতিক্রিয়া সঙ্গে সঙ্গেই জানাতে পারে। এই পরিবর্তনটা আমার কাছে ইতিবাচক, কারণ এটি শিল্পীকে আরও চ্যালেঞ্জ নিতে শেখায়।’
সংগীতাঙ্গনে সিন্ডিকেটের প্রসঙ্গেও কথা বলেন মিলা। গায়িকার ভাষ্য, ‘প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু বাস্তবতা থাকে, আমাদের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, দিন শেষে শ্রোতাই আসল বিচারক। শ্রোতা যদি কোনো গান গ্রহণ না করেন, তবে কোনো সিন্ডিকেটই সেই গানকে বাঁচাতে পারবে না। যদি অনেকের কথা মেনে নিই যে সিন্ডিকেট আছে, তখন এটিও মনে রাখা উচিত, কয়েকজন শিল্পী বা সংগীত পরিচালকের নাম ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বাজারে আনা যায়–শ্রোতার হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া যায় না, যদি গান ভালো না হয়। তাছাড়া এখন সময় বদলে গেছে। যারা মনে করছেন সিন্ডিকেটের কারণে তারা থেমে আছেন, তাদের বলব, এই সময়টা আসলে সুযোগের সময়। ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক–এসব প্ল্যাটফরম দিয়ে আজকের দিনে অসংখ্য শিল্পী বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন।’
দেখতে দেখতে গানের জগতে দুই দশক পূর্ণ করেছেন মিলা। তবে গায়িকার মতে, আরো ২০ বছর গান গেয়ে যেতে চান তিনি। মিলা বলেন, ‘আমার কাছে দুই দশক কোনো দীর্ঘ সময় মনে হয় না। এখনো মনে করি আমি শুরুতেই আছি। আমি এখনো অনেক কিছু দিতে চাই। অনেক মঞ্চ, অনেক গান, অনেক শ্রোতা আমার অপেক্ষায়। হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে যখন চুপ করে বসে থাকি তখন মনে হয় সত্যিই কি ২০ বছর পার হয়ে গেল? অথচ আমার মনে হয়, যেন কিছু দিন আগেই শুরু করলাম। আমি পরের ২০ বছর নিয়ে ভাবতে চাই–কিভাবে নতুন প্রজন্মের হৃদয়েও ছাপ রাখতে পারি। শ্রোতার ভালোবাসা আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ। সেই ভালোবাসাই আমাকে সময়ের সঙ্গে হারিয়ে যেতে দেয়নি; বরং নতুন শক্তি দিয়েছে, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।’
এসএন