ব্যাংকে হিসাব নেই? তাহলে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকেও আপনি বঞ্চিত! শুধু টাকা জমা রাখাই নয় বেতন পাওয়া, অনলাইন কেনাকাটা, বিদেশি লেনদেন, এমনকি ভবিষ্যতে লোন বা ভিসার আবেদনেও জরুরি এই একখানা অ্যাকাউন্ট। তবে ভালো খবর হলো, এখন ব্যাংক হিসাব খোলা আগের মতো কঠিন নয়। কিছু সহজ কাগজপত্র আর সঠিক তথ্য জমা দিলেই খুলে ফেলতে পারবেন নিজের নামে একটি হিসাব। চাইলে ঘরে বসেই অ্যাপের মাধ্যমে হিসাব খোলার সুযোগও আছে। কী কী লাগবে, কেমন হিসাব খুলবেন— সব কিছু নিচে দেওয়া হলো।
কীভাবে ব্যাংক হিসাব খুলবেন?
ব্যাংকে হিসাব খোলার মাধ্যমে আপনার সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক শুরু হয়। প্রথমে আপনি টাকা জমা রাখবেন, ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে ঋণও নিতে পারবেন। এটি ব্যাংকের মূল কাজ— আমানত গ্রহণ ও ঋণ দেওয়া। বর্তমানে ব্যাংক হিসাব খোলা আগের চেয়ে অনেক সহজ। অনেক ব্যাংকে এখন অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ঘরে বসেই হিসাব খোলা যায়। তবে সেক্ষেত্রে কিছু কাগজপত্র ও তথ্য লাগবে।
হিসাব খোলার জন্য প্রয়োজন
* আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)
* পাসপোর্ট সাইজের ছবি
* একজন নমিনির ছবি ও এনআইডি
* ওই ব্যাংকে হিসাব আছে এমন একজন পরিচিতিদানকারী
* জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য একজনের নাম ও ঠিকানা
এ ছাড়া, প্রতিটি হিসাব খোলার সময় ‘গ্রাহক পরিচিতি ফরম’ (কেওয়াইসি) পূরণ করতে হয়। এতে নাম-ঠিকানা ছাড়াও পেশা, আয় ও ব্যয়ের তথ্য, অর্থের উৎস এবং হিসাব ব্যবহারের উদ্দেশ্য জানাতে হয়। যদি গ্রাহকের ই-টিআইএন নম্বর থাকে, সেটিও জমা দিলে সঞ্চয়ের ওপর ১০ শতাংশের জায়গায় মাত্র ৫ শতাংশ কর কাটা হয়।
শুধু হিসাব নয়, সেবাও বেছে নেওয়ার সুযোগ
হিসাব খোলার সময়ই গ্রাহক চাইলে অন্যান্য ব্যাংকিং সুবিধাও গ্রহণ করতে পারেন। যেমন- এটিএম কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এসএমএস অ্যালার্ট ইত্যাদি। গ্রাহকের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে এসব সেবা ধাপে ধাপে চালু না করে শুরুতেই অনুরোধ করাই সুবিধাজনক।
শুধু ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার জন্যও ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। একক মালিকানাধীন ব্যবসার জন্য প্রয়োজন পড়ে ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন সার্টিফিকেট এবং ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি। আবেদনপত্রে নমুনা স্বাক্ষর ও ছবি জমা দিতে হয় এবং অবশ্যই পরিচিতিদানকারীর স্বাক্ষর থাকতে হয়।
যদি প্রতিষ্ঠান যৌথ মালিকানার হয়, তবে অংশীদারত্ব চুক্তিপত্র, অংশীদারদের নাম-ঠিকানার তালিকা, ট্রেড লাইসেন্স এবং হিসাব পরিচালনার বিষয়ে অংশীদারদের সম্মতিসূচক সিদ্ধান্তের অনুলিপি দিতে হয়। এ ছাড়া, প্রয়োজনে সর্বশেষ অডিট রিপোর্ট বা পরিচালনা রিপোর্টও জমা দিতে হতে পারে।
লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ইনকরপোরেশন সার্টিফিকেট, মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশনের অনুলিপি, পরিচালক ও স্বাক্ষরকারীদের তথ্য এবং ব্যবসা শুরু করার সনদ (পাবলিক কোম্পানির ক্ষেত্রে) জমা দিতে হয়।
ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংক হিসাব জরুরি
ব্যাংক হিসাব শুধু টাকার লেনদেনের মাধ্যম নয়, এটি একজন ব্যক্তির আর্থিক পরিচয়ও তৈরি করে। ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়া, বিনিয়োগ করা কিংবা আয়কর সংক্রান্ত কাজে ব্যাংক হিসাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর্থিক সচেতনতা বাড়াতে এবং সুপরিকল্পিত অর্থব্যবস্থার জন্য সবাইকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
এসএন