পাকিস্তান আমাদেরকে কী গণতন্ত্র শেখাবে বলে প্রশ্ন করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বাংলাদেশ সফর করছেন। এটাকে অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো হচ্ছে।
আমাদের সঙ্গে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হতে পারে। আমাদের নির্বাচন নিয়েও উনাদের কিছু পর্যবেক্ষণ উনারা বলছেন। আমরা বুঝতে পারি না যে পাকিস্তান আমাদেরকে কি গণতন্ত্র শেখাবে?
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
মাসুদ কামাল বলেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানকে জেলের মধ্যে রেখে দিয়েছে তারা। ইমরান খানের দল স্বতন্ত্র নির্বাচন করে একক সংখ্যাগরিষ্টতায় প্রায় সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। সেই দলের নেতাকে তারা জেলে ভরে রেখেছে। এই হলো ওদের গণতন্ত্র অবস্থা। তারা আমাদের গণতন্ত্র সম্পর্কে হয়তো সবক-টবক দিবে। আমরা সেটা পেয়ে খুব আনন্দ অনুভব করব।
তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকের পর তারা কিছু সমঝোতা স্মারক, চুক্তি এগুলো করেছে। খুবই ইনসিগনিফিক্যান্ট। এগুলো দেশের জন্য খুব যে জরুরি বা গুরুত্বপূর্ণ আমি তাও মনে করি না।
পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংশিত ইস্যুর কথা উল্লেখ করে মাসুদ বলেন, তিনটা ইস্যু নিয়ে আমরা বলেছি তারা এগুলো কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না। এক নাম্বার ইস্যু হল ক্ষতিপূরণের ইস্যু। আমাদের সঙ্গে তাদের ক্ষতিপূরণের একটা ব্যাপার আছে। তারা ‘৭১ সালে আমাদের এখানে যে ক্ষতিগুলো করেছে- হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, ধ্বংস করেছে আমাদের অনেক কিছু, আমাদের অর্থনৈতিক যে বিশাল ক্ষতি করেছে সেগুলোর একটা হিসাব নিকাশের পর আমরা একটা ক্ষতিপূরণ পেতে পারি। এটা আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমেই পেতে পারি।
দ্বিতীয় ইস্যুর কথা উল্লেখ করে মাসুদ কামাল বলেন, আমাদের এখানে যে গণহত্যা হয়েছে সেই ব্যাপারে আমাদের দাবি পাকিস্তান দুঃখ প্রকাশ করুক। তারা মাফ চাক আমাদের কাছে যে আমরা অন্যায় করেছি, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাই। এ বিষয়টা নিয়ে ইমরান খান যখন পাকিস্তানে বিরোধী দলের ছিলেন, যখন প্রধানমন্ত্রী হননি তখন তিনি সংসদে বলেছিলেন পাকিস্তান গভমেন্টের উচিত বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া একাত্তর ঘটনা নিয়ে। এটা নিয়েও কোন প্রকাশ্য ক্ষমা আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ চায়নি।
তৃতীয় ইস্যুর কথা উল্লেখ করে মাসুদ বলেন, আমাদের এখানে পাকিস্তানের অনেক নাগরিক আটকা পড়ে আছে। আমরা বলি যে বিহারী ক্যাম্প আছে একটা মোহাম্মদপুর, আরেক জায়গা সৈয়দপুর, এরকম প্রচুর পাকিস্তানি আমাদের এখানে আটকা আছে। তারা পাকিস্তানে ফেরত যেতে চায় কিন্তু যেতে পারেনি। তারা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেনি এখন পর্যন্ত কিন্তু আমাদের এখানে বসবাস করছে। তারা তো পাকিস্তানের নাগরিক, তাদেরকে পাকিস্তান গভমেন্ট ফেরত নিবে এই দাবিটা আমরা করছি। এটা নিয়ে কোন আলোচনা, ডেভেলপমেন্ট এখন পর্যন্ত হয়নি।
মাসুদ কামাল আরো বলেন, এই তিনটা হলো আমাদের সঙ্গে তাদের অমীমাংশিত বিষয়। অথচ এই ইসহাক দার বলছেন সমাধান নাকি হয়ে গেছে। কবে হলো? সমাধান হয়ে থাকলে যে নাগরিকগুলো আটকা আছে এদের কি হবে? এদেরকে নিচ্ছেন না কেন আপনি?
কেএন/টিকে