ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ৫৬৪ কেজি সরকারি পাঠ্যবই বিক্রির অভিযোগে বিপিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে মানিক নামের এক ভাঙারি দোকান মালিককেও গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
এর আগে বিকেলে তাদের আটক করে উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পাঠ্যবই বিক্রির দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া ওই দুজনসহ ৩ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুল্লাহ।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিপিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলম ও সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম গত বুধবার বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির ৫৬৪ কেজি সরকারি পাঠ্যবই মানিক নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুল্লাহ মোবাইল ফোনে বই বিক্রির খবর পান। এ সময় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশে অফিসের নিরাপত্তা কর্মী শহিদুল, ফকিরগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ও সেনুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হুমায়ুন কবীর শহরের শান্তিবাগ এলাকা থেকে বিক্রি হওয়া বইয়ের মধ্যে ৯০ কেজি বই এক অটো চার্জার ভ্যানচালক সন্তোষ রায়ের কাছ থেকে উদ্ধার করে উপজেলায় নিয়ে আসেন।
বই উদ্ধারের সময় ওই ভ্যানচালক সন্তোষ জানায়, বাকি বই গুলো শহরের মাস্টার মোড় এলাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী মানিকের কাছে বিক্রি করেছেন। তার কথা মতো বই উদ্ধারের জন্য নিরাপত্তাকর্মী শহিদুল, প্রধান শিক্ষক মানিক এবং সহকারী শিক্ষক হুমায়ুনকে রাতেই ভাঙারি ব্যবসায়ী মানিকের দোকানে পাঠানো হয়।
এ সময় মানিক জানান, ৪৭৪ কেজি সরকারি বই তিনি বগুড়ায় বিক্রি করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় পরদিন বৃহস্পতিবার বিকালে বই বিক্রির বিষয়ে জানার জন্য প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমকে সঙ্গে নিয়ে ওই ভাঙারি দোকানে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুল্লাহ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
দোকানদার মানিক জানান, প্রধান শিক্ষক আলম ও ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক সালামের কাছ থেকে তিনি বই কিনেছেন।
প্রধান শিক্ষক আলমও বিষয়টি স্বীকার করেন। সরকারি বই বিক্রির প্রমাণ পাওয়ায় পর প্রধান শিক্ষক আলম ও দোকানদার মানিককে থানায় সোপর্দ করেন উপজেলা প্রশাসন।
রাতে প্রধান শিক্ষক আলম, সহকারী শিক্ষক সালাম এবং দোকানদার মানিকের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুল্লাহ।
এজাহার পাওয়ার পর পুলিশ আলম ও মানিককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সালাম পলাতক রয়েছে।
আটক হওয়ার সময় বিপিবি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলম জানান, বুধবার হঠাৎ করে স্কুলের স্টোররুমে সাপের আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে স্টোররুম পরিষ্কার করা হয়। আমাকে না জানিয়েই সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম বইগুলো বিক্রি করেছেন।
বই বিক্রির ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফুল্লাহ জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবে বিনামূল্যে সরবরাহ করা পাঠ্যবই বিক্রি করা চরম অন্যায় কাজ। বই বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, সরকারি বই বিক্রি করার অভিযোগে ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন গ্রেপ্তার হয়েছে। একজন পলাতক আছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ইউএনও রকিবুল হাসান জানান, সরকারি বই বিক্রির খবর পাওয়ার পর অভিযান চালানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও বই বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এফপি/ টিএ