বাজার মূলধনে যোগ হল ১০ হাজার কোটি টাকা

ডিএসই-তে সাপ্তাহিক লেনদেন বেড়েছে ২৬ শতাংশ

গেল সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের (২৪-২৮ আগস্ট) মধ্যে ৩ দিনেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। আলোচিত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির সবগুলো মূল্যসূচক ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের বাজারদর বেড়েছে। যার সুবাদের সার্বিক বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি। লেনদেনেও গতি ফিরেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে গড় লেনদেন বেড়েছে ২৬ শতাংশের বেশি।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ১৪৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৩৭৫ পয়েন্টে। বাছাই করা ৩০ কোম্পানির সূচক ডিএস ৩০ বেড়েছে ৬৮ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহের ২ হাজার ৮৯ পয়েন্ট থেকে বেড়ে সূচকটি ২ হাজার ১৫৭ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আর শরীয়াহ কোম্পানিগুলোর সূচক ডিএসইএস ১ হাজার ১৮০ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ১ হাজার ২০৭ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আলোচিত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ২৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৮ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। তালিকাভুক্ত আরও ১৭টি সিকিউরিটিজের সপ্তাহজুড়ে কোনো লেনদেন হয়নি। লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৬৮টির। কমেছে ১০৫টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির।

গেল সপ্তাহে সূচক ও অধিকাংশ সিকিউরিটিজের দরবৃদ্ধির চেয়েও বড় পরিবর্তন দেখা গেছে স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন চিত্রে। ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৩৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বা ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে। গত সপ্তাহে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে ১ হাজার ১৪৫ কোটি ৯১ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৯০৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৭২৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেন বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের। প্রতিদিন গড়ে এই খাত থেকে ১৭১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন এসেছে বস্ত্র খাতে, প্রতিদিন গড়ে যা ছিল ১৬৬ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান ছিল ব্যাংক খাতে, প্রতিদিন গড়ে যার পরিমাণ ছিল ১০২ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকৌশল খাত এবং সাধারণ বীমা খাত যথাক্রমে প্রতিদিন গড়ে ১০২ কোটি টাকা এবং ৯৩ কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ডিএসইতে অবদান রেখেছে।

লেনদেন ও সূচকে চাঙ্গাভাবের পাশাপাশি গেল সপ্তাহে স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধনেও চমক দেখা গেছে। পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৮ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকায়, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ১৮১ কোটি টাকা।

খাতভিত্তিক মুনাফা চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে শুধুমাত্র চামড়া ও পাট খাত বাদে সব খাতে ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে বস্ত্র খাতে, যার হার ছিল ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এই খাতে তালিকভুক্ত ৫৮টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৩৮টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৭টির আর ৩টি অপরিবর্তিত রয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিটার্ন এসেছে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে, ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। খাতটির তালিকাভুক্ত ১৭টি কোম্পানিতে শেয়ারদর বেড়েছে। ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সাধারণ বিমা খাত। এ খাতে তালিকভুক্ত ৪৩ কোম্পানির মধ্যে ৪০টির দর বেড়েছে, কমেছে ৩টির।

এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ও সিএসসিএক্স যথাক্রমে ২ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। সূচক দুটির বৃহস্পতিবার ১৫ হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে ও ৯ হাজার ৪৪৫ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া সিএসআই সূচক ১ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং সিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯৬৮ পয়েন্টে এবং ১৩ হাজার ৪৮২ পয়েন্টে। আর সিএসই-৫০ সূচক ১ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে ১১৬৪ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে।

গত সপ্তাহে সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১২৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৬৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে এক্সচেঞ্জটিতে ৩৩৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২০২টির, কমেছে ১১১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টির।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়: জিতু কমল Dec 20, 2025
img
‘ষড়যন্ত্রকারীর ইন্ধনে দেশ ও দেশের মানুষের ক্ষতি করবেন না’ Dec 20, 2025
img
আপনি জিতে গেছেন হাদি : ইরফান সাজ্জাদ Dec 20, 2025
img
ছক্কায় আহত দর্শক , নিজেই সেবা করলেন হার্দিক পান্ডিয়া Dec 20, 2025
img
শারমান যোশির সঙ্গে ছবি, ছোটপর্দা থেকে বিদায় নিলেন গৌরব? Dec 20, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে লড়াইয়ের ঘোষণা রুমিন ফারহানার Dec 20, 2025
img
এবার পান্তের নেতৃত্বে খেলবেন কোহলি Dec 20, 2025
img
ওসমান হাদির মৃত্যুতে কমনওয়েলথের শোক প্রকাশ Dec 20, 2025
img
অক্ষয়ের এই সাফল্যে আমি হিংসা অনুভব করছি না: মাধবন Dec 20, 2025
img
বীর-উত্তম এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক প্রকাশ Dec 20, 2025
img
নতুন সন্তানের আগমনে খুশি রণদীপ হুডা ও লিন! Dec 20, 2025
img
হাদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক : ধর্ম উপদেষ্টা Dec 20, 2025
img
মাইকের সামনে বেশি কিছু বলতে পারি না : বাপ্পারাজ Dec 20, 2025
img
নওগাঁয় ওসমান হাদির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত Dec 20, 2025
img

আজহারী

নিশ্চয়ই আসমানে এর চেয়ে বড় রাজকীয় অভ্যর্থনার আয়োজন চলছে Dec 20, 2025
img
''বিপিএল নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো সন্দেহ নেই'' Dec 20, 2025
img
ডেভিল হান্ট অভিযানে মৎস্যজীবী লীগ নেতা আটক Dec 20, 2025
img
ছেলেকে বাড়িতে রেখে দূরে কোথাও যাওয়া খুব কষ্টের: ভিকি কৌশল Dec 20, 2025
img
উসকানিমূলক কনটেন্ট নিয়ে মেটাকে সরকারের চিঠি Dec 20, 2025
img
শহীদ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে উত্তাল হচ্ছে শাহবাগ Dec 20, 2025