রেগে গেলে নিজেকে শান্ত করার উপায়

রাগ, ক্রোধ, দুঃখ, মন খারাপ এসব জীবনেরই অংশ। কিন্তু যখন আপনি ক্রোধান্বিত হয়ে পড়েন অথচ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হন, তখন তা আপনার দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

কখনও কি এমন হয়েছে যে, আপনি খুব রেগে গেছেন কিন্তু নিজেকে শান্ত করতে পারছেন না? যাইহোক, আমরা যখন প্রচণ্ড রেগে যাই তখন নিজেকে শান্ত করা খুব কঠিন কাজ।

সে কারণেই যখন আপনি খুব রেগে যাবেন, তখন কিছু কৌশল গ্রহণ করা বাস্তবিক অর্থেই খুব প্রয়োজন।

চলুন জেনে নিই রাগ প্রশমনের সহজ কৌশল-

লম্বা ও গভীর শ্বাস নিন
যখন আপনি উদ্বিগ্ন বা রাগান্বিত হয়ে যান তখন আপনি দ্রুত ও ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে শুরু করেন। ফলে আপনার মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে ‘আক্রমণ অথবা পলায়ন’ নীতি গ্রহণ করে। অর্থাৎ আপনি তখন কোনো রকম সমঝোতার কথা ভাবেন না, বরং সম্ভব হলে বল প্রয়োগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে চেষ্টা করেন অথবা তার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এই দু’টির কোনোটিই বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকের কাজ নয়।

তবে, দীর্ঘ ও ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাস পরিচালনার মধ্য দিয়ে আপনি আপনার মস্তিষ্কে বিভিন্ন নির্দেশনা পাঠাতে পারেন। সে উদ্দেশ্যে মনে মনে এক দুই তিন পর্যন্ত গুনুন আর তিন সেকেন্ড সময় নিয়ে ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস টানুন, তারপর তিন সেকেন্ড নি:শ্বাস চেপে রাখুন এবং তিন সেকেন্ড সময় নিয়ে ধীরে ধীরে নি:শ্বাস ত্যাগ করুন।

আপনি রেগে আছেন সেটা স্বীকার করে নিন
যখন আপনি রেগে আছেন তখন সেটা অস্বীকার করবেন না, বরং নিজেকে বলুন- আমি এখন খুব রেগে আছি। যখন আপনি আপনার অনুভূতিগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন এবং নিজেকে তা প্রকাশের অনুমতি দেবেন, তখন ক্রোধ বা উদ্বেগ আস্তে আস্তে কমে যাবে।

নিজের ভাবনাগুলো চ্যালেঞ্জ করুন
উদ্বেগ বা ক্রোধের পেছনে অধিকাংশ সময় অনেক অযৌক্তিক চিন্তা-ভাবনা থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলি সব থেকে নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কিত। যদি এটা হয়, যদি ওটা হয়, এরকম নানা যদি’র আবর্তনচক্রে আপনি তখন আটকা পড়ে যান। যদি আপনি এই দুষ্টু চক্রে আটকা পড়ে যান তাহলে ভাবনাগুলি থামিয়ে দিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন।

এটা কি সত্যিই হবে? এই ভাবনা কতটা যৌক্তিক? এটা কি আমার সঙ্গে আগেও হয়েছে? সব থেকে খারাপ কি হতে পারে? আমি কি সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবো না?

তারপর আপনার নেতিবাচক ভাবনাগুলো ইতিবাচক ভাবনায় বদলে নিন।

শারীরিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত হয়ে উঠুন
নানা শারীরিক কর্মকাণ্ড, যেমন- হাঁটতে যাওয়া, দৌড়াতে যাওয়া, শরীরচর্চা প্রভৃতি করার মধ্য দিয়ে আপনি উদ্বেগ বা ক্রোধ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কারণ শারীরিক কর্মকাণ্ডের ফলে আমাদের দেহ থেকে সেরোটোনিন নামক এক ধরণের হরমোন নিঃসরণ ঘটে, যা আমাদেরকে শান্ত হতে সহায়তা করে।

নিজেকে শান্ত কল্পনা করুন
এই কৌশলটি অনুসরণ করতে শ্বাস-প্রশ্বাস কৌশলটি অনুসরণ করতে হবে। কয়েকটি দীর্ঘ ও গভীর শ্বাস-শ্বাসের পর চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত কল্পনা করুন।

গান শুনুন
এর পরের বার যখন আপনি প্রচণ্ড রেগে যাবেন, তখন হাতে হেডফোন তুলে নিন এবং পছন্দের গানগুলি শুনতে থাকুন। গান আমাদের দেহ ও মনে শান্তি বিস্তার করতে সক্ষম।

শরীর শিথিল করুন
যখন আপনি রেগে যান বা উদ্বিগ্ন থাকেন, তখন আপনার দেহের পেশীগুলো টানটান হয়ে যায়। পেশীগুলি শিথিল করার অভ্যাস গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে আপনি নিজেকে শান্ত করে তুলতে পারেন।

লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন, হাত দু’টি শরীরের পাশে বিছিয়ে দিন। লম্বা ও দীর্ঘ শ্বাস নিতে শুরু করুন।

ভাবনাগুলো লিখে ফেলুন
যদি আপনি খুব রেগে গিয়ে থাকেন বা উদ্বিগ্ন অবস্থায় থাকেন তাহলে একটি কলম নিয়ে আপনার ভাবনাগুলো লিখে ফেলুন। বাক্য শেষ করা, যতি চিহ্নের ব্যবহার বা শুদ্ধ বানান এসব নিয়ে ভাবার দরকার নেই- শুধু লিখুন। লেখা আপনাকে নেতিবাচক চিন্তাগুলি মাথা থেকে বের করতে সাহায্য করে।

মনোযোগের কেন্দ্রস্থল পরিবর্তন করুন
যখন আপনি কোনো বিষয় নিয়ে খুব রেগে যাবেন বা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠবেন, তখন সেই পরিস্থিতি থেকে আপনার মনোযোগ অন্য কোথাও ঘুরিয়ে দিন। সে ক্ষেত্রে আপনি অন্যদিকে তাকাতে পারেন, ঘরের ভেতর হাঁটাহাঁটি করতে পারেন, কিংবা বাইরে থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

মুক্ত বাতাসে যাবার চেষ্টা করুন
রুমের তাপমাত্রা এবং বায়ুপ্রবাহ আপনার ক্রোধ বা উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যদি আপনি খুব দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন আর যদি আপনার স্থানটি সংকীর্ণ ও গুমোট হয়, তাহলে প্যানিক অ্যাটাকের মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। তাই বদ্ধ পরিবেশ থেকে যত সম্ভব বেরিয়ে আসুন, কয়েক মিনিটের জন্য হলেও মুক্ত বাতাসে থাকতে চেষ্টা করুন। সূত্র: হেলথলাইনডটকম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পুলিশের অস্ত্র উদ্ধারে আবারও পুরস্কার ঘোষণা Nov 05, 2025
img
বিমানবন্দরে আগুনের ঘটনায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন ১৫ নভেম্বরের মধ্য: নাসিমুল গনি Nov 05, 2025
img
জাপানের ভাইস-মিনিস্টারের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ স‌চিবের সাক্ষাৎ Nov 05, 2025
img
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জয়-পুতুলসহ আসামি ৮ জন Nov 05, 2025
img
লন্ডনের রাস্তায় মুগ্ধতা ছড়ালেন অপু বিশ্বাস Nov 05, 2025
img
নির্বাচনের পর ব্যারাকে ফিরে যাবে সেনাবাহিনী: মাইনুল ইসলাম Nov 05, 2025
img
নির্বাচন হলে দেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে : সেনাসদর Nov 05, 2025
img

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবির

একটি বিশেষ ছাত্রসংগঠনের মন রক্ষার্থে নির্বাচন কমিশন জকসু নির্বাচন পিছিয়েছে Nov 05, 2025
img
মামদানি বাংলাদেশি হলে তাকে ‘শাহবাগী’ ট্যাগ দেওয়া হতো: মেঘমল্লার বসু Nov 05, 2025
img
ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়াল বাংলাদেশ Nov 05, 2025
img
দুটি বাড়ি বিক্রি করলেন অমিতাভ বচ্চন Nov 05, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরো ১০ জনের মৃত্যু Nov 05, 2025
img
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ Nov 05, 2025
img

প্রেস সচিব

এয়ার ফোর্সের সব প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ঢাকার বাইরে পরিচালনার সুপারিশ Nov 05, 2025
img
তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা Nov 05, 2025
img
অপরাধে জড়ালে জামিনপ্রাপ্ত আ. লীগ কর্মীদের কঠোর ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Nov 05, 2025
img
মাঠ থেকে কেন সরানো হচ্ছে সেনাবাহিনীর ৫০% সদস্য, জানা গেল কারণ Nov 05, 2025
img
চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ Nov 05, 2025
img
বিএনপি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক : মাসুকুল রাজীব Nov 05, 2025
img
নিউজিল্যান্ডকে ৭ রানে হারালো ওয়েস্ট ইন্ডিজ Nov 05, 2025