ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে দেওয়া কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ঘিরে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজনীতিতে।বাম জোট সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১’ ও ‘অদম্য ২৪’-এর প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত জিএস পদপ্রার্থী এস. এম. ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন। তাকে এক ফেসবুক পোস্টে গণধর্ষণের হুমকি দেন ঢাবি শিক্ষার্থী আলী হুসেন। তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আলী হুসেনের বিষয়ে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল ভিন্ন ভিন্ন দাবি করছে। প্রথমে ছাত্রশিবির অভিযোগ করে, আলী হুসেনকে তাদের কর্মী বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সংগঠনের দাবি, তার সঙ্গে শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি আলী হুসেন নিজেও ফেসবুক লাইভে এসে বলেছেন, তিনি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নন। শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, যাতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে শাস্তির আওতায় আনা হয়।
অন্যদিকে, ছাত্রদল দাবি করছে, রিট আবেদনকারী নারী শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া শিক্ষার্থী আসলে শিবিরেরই নেতা। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়ে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রদল।
ছাত্রদলের এই বিবৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে শিবির। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম ছাত্রদলের অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সম্প্রতি যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রশ্নে নিজেদের কলঙ্ক ঢাকতে ছাত্রদল এখন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে জড়িয়ে নোংরামি করছে।’
সে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতারা বিভিন্ন সময়ে নারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং, স্লাটশেমিং, ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত। নারী শিক্ষার্থীদের মানসম্মান ধ্বংস করার নোংরা রাজনীতিতে ছাত্রদল ফ্যাসিস্ট ছাত্রলীগের মতই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাদের হাতেই ২০০২ সালে বুয়েটের মেধাবী নারী শিক্ষার্থী সাবেকুন্নাহার সনির রক্ত লেগে আছে।
ছাত্রদলের হাতেই ঢাবির শামসুন্নাহার হলে ২০০২ সালে শতশত নারী শিক্ষার্থী নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়। অথচ আজ তারাই উল্টো ছাত্রশিবিরকে অভিযুক্ত করছে, যা ধৃষ্টতা ও মিথ্যাচারের সীমা অতিক্রম করে।’
তারা আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে জানাচ্ছি, অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনোভাবেই ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত নয়। বরং তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অপরাধীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকেই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ছাত্রশিবির নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রশ্নে কখনোই আপস করে না। কিন্তু নারী নির্যাতনের মতো সংবেদনশীল বিষয়কে ব্যবহার করে সস্তা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে থাকা ছাত্রদলের আসল চেহারা আজ সবাই চিনতে পেরেছে।’
শেষে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ছাত্রদলকে সতর্ক করে বলা হয়, ‘ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন। কোনো কিছু হলেই শিবিরকে দায় দিয়ে দাও—এর মতো জঘন্য দেউলিয়াপনার রাজনীতি বন্ধ করুন। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া ও ওপেন ইনফরমেশনের এই যুগে শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করে দেবে, নারী নির্যাতনের মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে অপপ্রচারের জবাব কিভাবে দিতে হয়।’
এমআর