চলতি মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এই ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভো।
বেলজিয়ামের উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন প্রেভো। এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘জাতিসংঘ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে বেলজিয়াম! আর ইসরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’’
প্রেভো বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২টি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বেলজিয়াম। এর মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরের অবৈধ ইসরায়েলি বসতি থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ এবং ইসরায়েলি কোম্পানির সঙ্গে সরকারি ক্রয় নীতির পুনর্বিবেচনার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বেলজিয়ামের মধ্যপন্থী লেস এনগেজেস পার্টির সদস্য প্রেভো বলেন, ফিলিস্তিনে, বিশেষ করে গাজায়, যে মানবিক বিপর্যয় ঘটছে তার প্রেক্ষিতে বেলজিয়াম এ অঙ্গীকার করছে। তিনি বলেন, গাজা থেকে শেষ বন্দির মুক্তি এবং ফিলিস্তিন পরিচালনায় হামাসের কোনও ভূমিকা না রাখার পরই এই স্বীকৃতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে।
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেলজিয়ামের স্বীকৃতি দেওয়ার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেলজিয়াম। দেশটিতে বলেছে, গাজায় গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি, অনাহার ও ভূমি দখল বন্ধের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে এবং সংঘাতের সমাধানে একটি বাস্তব রাজনৈতিক পথ খোলার প্রত্যাশায় বেলজিয়াম এই স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির এই সিদ্ধান্তকে ‘‘আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানকে রক্ষা এবং শান্তি অর্জনে সহায়ক’’ হিসেবে দেখছে বেলজিয়াম।
তবে এই বিষয়ে ইসরায়েলি সরকার তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। যদিও ইসরায়েলের বিরোধী দল ইসরায়েল বেইতেনুর নেতা আভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ব্যর্থতার ফল বেলজিয়ামের সিদ্ধান্ত।
‘‘নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অদক্ষতার কারণে আমাদের চোখের সামনেই একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে,’’ এক্সে লিখেছেন লিবারম্যান। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি ও নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপে যোগ দেওয়ার বেলজিয়ামের সিদ্ধান্ত তার রাজনৈতিক ব্যর্থতার আরেকটি প্রত্যক্ষ ফল।
এর আগে, গত জুলাইয়ের শেষের দিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বিশ্বনেতারা যখন ইউএনজিএর অধিবেশনে মিলিত হবেন, তখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ফ্রান্স স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা দেন। ফিলিস্তিনকে বেলজিয়ামের স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত কেবল প্রতীকী মনে হলেও ইউরোপজুড়ে তা বড় ধরনের গতি তৈরি করেছে বলে ব্রাসেলস থেকে জানিয়েছেন আল জাজিরার হাসেম আহেলবারা।
‘‘এর মানে হলো, প্রতিটি ইউরোপীয় দেশ যারা বলছে ‘আমরা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছি’ তারা ১৯৬৭-পূর্ব সীমান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিনি স্বাধীন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেবে এবং পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে।’’ ওই সীমান্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সীমান্তের মাঝে পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেমও রয়েছে।
আরও কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে তা লুক্সেমবার্গ ও ইতালির ওপর চাপ বৃদ্ধি করবে বলে মনে করেন হাসেম। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়ে যৌথভাবে বৈঠক আয়োজনের কথা রয়েছে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং যুক্তরাজ্যও এ মাসেই শর্তসাপেক্ষে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
ইএ/টিকে