ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) শত শত নারী গোলাপি রংয়ের পোশাক পরে এবং ঝাঁটা হাতে মিছিল করে সংসদের সামনে জড়ো হন। পুলিশি নির্যাতন ও সরকারি ব্যয় অপচয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভে নেমেছে ইন্দোনেশিয়ার শত শত নারী।
প্রতিবাদের নেতৃত্ব দেয় ইন্দোনেশিয়ান উইমেনস অ্যালায়েন্স (আইডাব্লিউএ)। এটি ৯০টি নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, শ্রম ইউনিয়ন ও আদিবাসী গোষ্ঠীর সম্মিলিত একটি জোট।
মিছিলকারীরা বলেন, ঝাড়ু তাদের রাষ্ট্রের ময়লা, সামরিকীকরণ এবং পুলিশি দমন-পীড়নকে ঝেঁটিয়ে বিদায় দেওয়ার প্রতীক। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘পুলিশ সংস্কার চাই’, ‘বিক্ষোভ অপরাধ নয়, নাগরিকের অধিকার’।
এই বিক্ষোভ এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও এমপিদের বিলাসবহুল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জনগণের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে গোটা দেশ। এর আগে পুলিশের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলচালক আফফান কুরনিওয়ান নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়।
বিক্ষোভ জোরালো হওয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রাবৌ সুবিয়ান্তো বলেন, ‘সামরিক কুচকাওয়াজ উপলক্ষে তিনি চীন সফর বাতিল করবেন। তবে বুধবার তাকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি গ্রুপ ছবিতে দেখা যায়।’
নিহত আফান ছিলেন একটি রাইড-শেয়ার কম্পানির চালক। তার ইউনিফর্ম ছিল সবুজ। তার প্রতি সংহতি জানিয়ে অনেক বিক্ষোভকারী সবুজ রঙের পোশাক পরেছেন। অনলাইনে এই দুই রঙকে বলা হচ্ছে, ‘হিরো গ্রিন’ ও ‘ব্রেভ পিংক’। প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো বিক্ষোভের চাপে এমপিদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা কমানোর ঘোষণা দেন।
তবে বিশ্লেষক ও আন্দোলনকারীদের মতে, এটি ‘প্রতীকী পদক্ষেপ’ এবং পর্যাপ্ত নয়।
ইন্দোনেশিয়ার আইন সহায়তা ফাউন্ডেশনের মতে, আগস্টের শেষ দিকের বিক্ষোভে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন এবং ১ হাজার ৪২ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, যাদের অনেকেই পুলিশের সহিংসতার শিকার। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর ‘ত্বরিত, নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত’ দাবি করেছে।
এই আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৮ সালে স্বৈরাচারী শাসক সুহার্তোর পতনের সময়ও নারীরা একইভাবে রাজপথে নেমেছিলেন। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিতে এবারও তারা 'পরিবর্তনের ঝাঁটা' হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
সূত্র : বিবিসি
এমআর/এসএন