পরিবার ও আত্মিক শান্তিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন সুরকার এ আর রহমান

যার সুরে ভেসে ওঠে আত্মার ভাষা, যার সংগীত ছুঁয়ে যায় সময়ের সীমা— সেই এ আর রহমান এবার খ্যাতির আলো থেকে একটু সরে এসে ভাগ করে নিলেন জীবনের এক অন্তরঙ্গ অধ্যায়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বছরের পর বছর নিরলস পরিশ্রমের পর এখন কর্মজীবনের গতি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন। পরিবার, আত্মিক শান্তি এবং নিজস্ব বিকাশকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছেন তিনি।

এ আর রহমান বলেন, ‘অনেক সময় সব পরিকল্পনা করেও তা বাতিল হয়ে যায়। কখনও কখনও সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আমি জলের মতো—প্রবাহিত, নমনীয়, নিঃশব্দ। যে পাত্রে রাখা হয়, তারই আকার ধারণ করি। কাজও আসে নিজের ছন্দে, নিজের নিয়মে। ঈশ্বরের সময়চক্রে আমার জন্য আলাদা এক পথ থাকে— যেখানে ধৈর্যই আমার দিশা, আর বিশ্বাসই আমার গতি।’

এই কথাগুলি যেন গায়কের সৃষ্টিশীলতার অন্তর্নিহিত দর্শন— যেখানে তিনি নিজেকে সময়ের হাতে সঁপে দেন, স্রষ্টার ইচ্ছায় ভেসে চলেন। তার সঙ্গীত যেমন বাঁধা পড়ে না কোনও গতে, তেমনই তার জীবনও এক অনির্ধারিত স্রোত।

সাফল্যের শিখরে থেকেও আত্মসন্ধানী এই অস্কারজয়ী সুরকার অকপটে স্বীকার করেন, কর্মজীবনের শুরুতে কাজের পেছনে ছুটতে ছুটতে জীবনের অনেক মূল্যবান অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছিলেন।

তিনি বললেন, ‘আগে আমি যেন এক উন্মাদ ছিলাম, দিন-রাত কাজ করতাম। অতিরিক্ত কাজ করলে জীবনের আসল স্বাদ মিস হয়ে যায়।’

এখন তিনি সেই ছুটে চলা থামিয়ে দিয়েছেন। নিজেকে সময় দিচ্ছেন নতুন কিছু শেখার, অনুভব করার, এবং পরিবারের সঙ্গে জীবন উপভোগ করার।

রাহমানের এই পরিবর্তন শুধু সময় ব্যবস্থাপনার নয়, বরং তার জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির এক মৌলিক রূপান্তর। খ্যাতি, সুর, আর সাফল্যের বাইরেও তিনি খুঁজে পেয়েছেন জীবনের আসল অর্থ-সম্পর্ক, সংবেদন আর আত্মিক শান্তি। তার এই যাত্রা যেন মনে করিয়ে দেয়, জীবনের সেরা সুরগুলো কখনও কখনও নীরবতার মধ্যেই জন্ম নেয়।

সম্প্রতি রহমানের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। তার বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও সুরকার সরাসরি কিছু বলেননি। তবে পরিবার ও প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো নিয়ে তাঁর জোরালো মন্তব্যে স্পষ্ট, ব্যক্তিগত সম্পর্কই তাঁর জীবনের অগ্রাধিকারের কেন্দ্রবিন্দু।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে সায়রা বানুকে বিয়ে করেন এ আর রহমান। প্রায় তিন দশকের দাম্পত্য জীবনে তারা একসঙ্গে গড়েছেন সুরভরা সংসার, বড় করেছেন তিন সন্তান— খাতিজা, রহিমা ও এ আর আমিন। এই সম্পর্কের স্থায়িত্ব এবং গভীরতা তার জীবনের সেই সুর, যা হয়তো কোনও মঞ্চে বাজে না, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে অনুরণিত হয়।

এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে ছিটকে গেলেন প্রোটিয়া ব্যাটার Sep 04, 2025
img
ইংল্যান্ডের প্রথম মুসলিম ফুটবলার হিসেবে ইতিহাস গড়ার পথে স্পেন্স Sep 04, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ Sep 04, 2025
img
ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন, আইপিএলে তিন হ্যাটট্রিকের মালিক Sep 04, 2025
img

প্রেসক্লাবে শামসুজ্জামান দুদু

নির্বাচন বানচালের যে ষড়যন্ত্র তার উদ্যোক্তা আওয়ামী লীগ Sep 04, 2025
img
মিথ্যা হলফনামা দিয়ে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেন শেখ রেহানা Sep 04, 2025
img
বেঙ্গালুরুর ঘটনায় অবশেষে মুখ খুললেন কোহলি Sep 04, 2025
img
ডাকসু নিয়ে ষড়যন্ত্র করলে পরিণতি হাসিনার থেকেও খারাপ হবে : সাদিক কায়েম Sep 04, 2025
img
যারা নির্বাচনে আসতে চায় না তারা হাসিনার সুরেই কথা বলছে : আমীর খসরু Sep 04, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস কমিউটার ট্রেন লাইনচ্যুত Sep 04, 2025
img
সরকারের ভেতরে আরেকটা সরকার আছে : নিলোফার মনি Sep 04, 2025
img
ক্রুষ্ণার সঙ্গে অভিমান করে কিকু সত্যিই কি ছেড়ে দিচ্ছেন কপিলের শো! Sep 04, 2025
img

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি

শেখ হাসিনাসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিন মামলায় ৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ Sep 04, 2025
img
চবি আবার উত্তাল, প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের Sep 04, 2025
img
মুক্তি পেয়েছে আফরান নিশোর ওয়েব সিরিজ ‘আকা’ Sep 04, 2025
img
১০১ কোটিতে ৬০টি পাজেরো কেনার প্রস্তাব, অর্থ উপদেষ্টাকে নিয়ে মুখ খুললেন তাজনুভা Sep 04, 2025
img
জাপাকে নিয়ে বর্তমানে খাজুরে আলাপ হচ্ছে : রনি Sep 04, 2025
img
আর্জেন্টিনায় মেসির শেষ ম্যাচের আগে কাঁদলেন কোচ স্ক্যালোনি Sep 04, 2025
img
দুর্নীতি দমনেই গণতন্ত্র পুনর্গঠন সম্ভব : টিআই চেয়ারপারসন Sep 04, 2025
img
আমরা কেউ আস্থার জায়গায় নেই : ইসি আনোয়ারুল Sep 04, 2025