পশ্চিমা সেনারা হামলার ‘বৈধ নিশানা’ হবে ইউক্রেনে: পুতিন

ইউক্রেনে মোতায়েন করা যেকোনো পশ্চিমা দেশের সেনারা মস্কোর হামলার বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের মিত্রদের দেশটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা সুরক্ষার পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার মধ্যে আজ শুক্রবার এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ জানান, ২৬টি দেশ ইউক্রেনকে যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে স্থল, সমুদ্র ও আকাশসীমায় আন্তর্জাতিক বাহিনীর তদারকের বিষয়টি থাকবে। মাখোঁর এই বক্তব্যের পরদিনই পুতিন এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, ইউক্রেনে তাদের যুদ্ধ শুরু করার অন্যতম কারণ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো যাতে ইউক্রেনকে জোটভুক্ত করতে না পারে এবং ইউক্রেনে তাদের বাহিনী মোতায়েন করতে না পারে।

শুক্রুবার ভ্লাদিভস্তকে একটি অর্থনৈতিক ফোরামে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তাই বিশেষ করে এখন সামরিক অভিযানের সময় যদি সেখানে (ইউক্রেনে) কিছু সেনা এসে হাজির হন, সেই বাস্তবতায় আমরা ধরেই নিই যে বিনাশ করার জন্য তাঁরা বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।’

পুতিন বলেন, ‘আর যদি এমন কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যা শান্তির দিকে নিয়ে যাবে, দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে, তাহলে আমি ইউক্রেনের ভূখণ্ডে তাদের (পশ্চিমা সেনাদের) উপস্থিতির কোনো অর্থ দেখি না; এ বিষয়ে এটিই আমার শেষ কথা।’

ভবিষ্যতে যেকোনো চুক্তির অধীনে ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য কী ধরনের নিশ্চয়তা থাকবে, সে বিষয়ে মস্কো এবং কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের অবস্থানের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, তা পুতিনের এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে।

ভবিষ্যতে যেকোনো আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে জোরালো সমর্থন চাইছে। ইউক্রেনকে সহায়তায় একটি ‘ইচ্ছুক জোট’ সমন্বয়ের ভূমিকায় রয়েছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। দেশ দুটি ইঙ্গিত দিয়েছে, যুদ্ধ শেষ হলে তারা ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন করতে প্রস্তুত।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ওয়াশিংটন ইউক্রেনে সেনা মোতায়েন করবে না। তবে আকাশপথের সুরক্ষায় সহায়তাসহ অন্যান্য সহযোগিতা দিতে পারে তারা।

পুতিন বলেছেন, অবশ্যই রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ের জন্যই নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, অবশ্যই রাশিয়া এই সমঝোতাগুলো বাস্তবায়ন করবে। তবে যা-ই হোক না কেন, এখনো কেউ আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেনি।’ 

দ্রুত এই যুদ্ধ শেষ করার অঙ্গীকার নিয়ে জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মাসে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তবে সেই বৈঠকে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সরাসরি কোনো সাফল্য আসেনি।

৮০ বছরের মধ্যে ইউরোপে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে পুতিন আজ বলেছেন, এ ধরনের বৈঠকের খুব বেশি অর্থ দেখেন না। কারণ, ইউক্রেনীয় পক্ষের সঙ্গে মূল বিষয়গুলো নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো বাস্তবে অসম্ভব হবে।

অবশ্য এরপরও মস্কোয় জেলেনস্কিকে আতিথেয়তা দেওয়ার যে প্রস্তাব চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে দিয়েছেন, সেটি আজও পুনর্ব্যক্ত করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আমি প্রস্তুত। অনুগ্রহ করে আসুন, আমরা অবশ্যই আলোচনার পরিবেশ এবং নিরাপত্তার শতভাগ নিশ্চয়তা দেব।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘কিন্তু যদি তারা আমাদের বলে, “আমরা আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই, কিন্তু এই বৈঠকের জন্য আপনাকে অন্য কোথাও যেতে হবে”, তাহলে আমার মনে হয়, এটা আমাদের কাছে কেবলই বাড়তি আবদার।’

মস্কোয় বৈঠকের সম্ভাবনার বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ না করে জেলেনস্কি আজ শুক্রবার বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো ধরনের বৈঠকের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আমরা মনে করি না যে পুতিন এই যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তিনি কথা বলতে পারেন, কিন্তু সেগুলো শুধুই কথার কথা এবং কেউই তাঁর কথা বিশ্বাস করে না।’


ইউটি/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img

দাবি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর

দুই মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চাইবে ভারত! Sep 06, 2025
img
সালমান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী আজ Sep 06, 2025
img
দেশের বাজারে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ? Sep 06, 2025
img
এআই দিয়ে শাহরুখের ছবি বানালে কোটি টাকার কেস! Sep 06, 2025
img
বৃষ্টিহীন ঢাকায় গরমে অস্বস্তি, সকালেই তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি Sep 06, 2025
img
বছরজুড়ে মহানবীর জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জামায়াতের Sep 06, 2025
img
তাহসানের বাবা হওয়ার খবর সত্য নয়! Sep 06, 2025
img
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে গভীর আলোচনা চলছে : ট্রাম্প Sep 06, 2025
img
৩ দফা দাবি পূরণে উপাচার্যের লিখিত আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন ববি শিক্ষার্থীরা Sep 06, 2025
img
আওয়ামী লীগের জন্মই হয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার ল্যাবরেটরিতে : রিজভী Sep 06, 2025
img
সুদানে ভয়াবহ ভূমিধসে দুই শতাধিক শিশুর মৃত্যু Sep 06, 2025
img
বিসিবি সভাপতির হুমকির অভিযোগ সমবেদনা আদায়ের কৌশল: আমিনুল হক Sep 06, 2025
img
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) Sep 06, 2025
img
নুরাল পাগলের দরবারে হামলা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের দায়িত্বহীনতার পরিচয় : এনসিপি Sep 06, 2025
img
অস্ট্রীয় অর্থনীতিবিদের এক্স অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক Sep 06, 2025
img
রিজানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের Sep 06, 2025
img
স্বাস্থ্যখাত ও ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল আ.লীগ : রহমাতুল্লাহ Sep 06, 2025
img
জয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শুরু ফ্রান্সের, এস্তোনিয়ার জালে ইতালির গোল উৎসব Sep 06, 2025
img
অতীতে রাষ্ট্রের সম্পদ লুটকারীদের হাতে আর ক্ষমতার চাবি দেবেন না: জামায়াত আমির Sep 06, 2025
img
চবির সহিংসতা ঘিরে ফের আলোচনায় সিএমপির নতুন ৮ থানার প্রস্তাব Sep 06, 2025