স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আমাদের মুন্সীগঞ্জবাসীরই একটি প্রাণের দাবি ছিল- এখানে একটি পুলিশ ক্যাম্প করা। আল্লাহর কৃপায় স্থায়ী ক্যাম্প না হলেও সাময়িকভাবে এটি খোলা হয়েছে। আশা করছি এটি স্থায়ী হয়ে যাবে। আমি নিজেও মুন্সীগঞ্জবাসী। তাই আমাদের মুন্সীগঞ্জের বাইরের ভাইয়েরা যারা আছেন, তাদের পক্ষ থেকেও ধন্যবাদ জানাই।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বহু আলোচিত মেঘনাপাড়ের গুয়াগাছিয়া পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গত তিরিশ- চল্লিশ বছরের ঘটনা আমি বলতে পারব না, তবে এখানে একটি ক্যাম্প দরকার- এটা আমি অনুভব করি। আমি বলছি না যে আমাদের দেশে এক হাজারের বেশি সমস্যা নেই। দেশে তো সমস্যাই হচ্ছে, কিন্তু আমাদের সেই সমস্যার ভেতর থেকেই কাজ করে যেতে হবে। আমরা যেটা ভালো মনে করব, সেটাই করব। এখন অনেকের অনেক ধরনের স্বার্থ থাকে। সবাই তাদের নিজ নিজ স্বার্থ হাসিল করতে চাইবে। কিন্তু আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করব, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘নয়ন ও পিয়াশের প্রসঙ্গে আমি জিজ্ঞাসা করছিলাম- শোনা যাচ্ছে তারা দেশে নেই, পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে চলে গেছে। তবে দেশে ফিরে এলে তাদের কেরানীগঞ্জ জেলখানা ছাড়া অন্য কোথাও স্থান হবে না। এই এলাকায় তাদের কোনো স্থান হবে না। ফাঁড়িটি স্থায়ী করার জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে। আশা করছি, আল্লাহর কৃপায় এটি স্থায়ী ফাঁড়ি হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘যেসব অবৈধ অস্ত্র রয়েছে- আমি আগেই বলেছি, আমরা একটি ঘোষণা দিয়েছি; আপনারা আমাদের খবর দিন, আমরা ধরে ফেলব। আর যিনি খবর দেবেন, তাকে পুরস্কৃত করা হবে এবং তার পরিচয় গোপন রাখা হবে। পুলিশকে শক্তিশালী করার জন্য কোস্টগার্ডের টহলও বাড়ানো হবে।’
আলু নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আলুর ব্যাপারে সত্যিই কৃষকরা দাম পাচ্ছেন না। এজন্য আমরা কোল্ড স্টোরেজে গেটে আলুর দাম কেজিতে ২২ টাকা নির্ধারণ করেছি। এ কারণে এখন আলু খুব বেশি বের হচ্ছে না। তবে এক টাকা বা দেড় টাকা করে দাম বাড়ছে। আমি আশা করি, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আলুর দাম আরও বাড়বে।’
খুচরা বাজার দর নির্ধারণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘খুচরা বাজার তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আমরা বড় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। তবে আপনাদের সবার মুখ আমি তো বন্ধ করতে পারব না, পারব? একজন না একজন প্রশ্ন তুলবেই।।’
এসময় ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফাতেমা তুল জান্নাত, পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার, গজারিয়া ইউএনও মো. আশরাফুল আলম, মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক সফিকুল ইসলাম, কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ ও পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
দীর্ঘ নদী পথ পাড়ি দিয়ে উপদেষ্টা দুর্গম এলাকার পুলিশ ক্যাম্পটি পরিদর্শনে খুশি স্থানীয়রা। গ্রামবাসীরা এ সময় দল বেঁধে এসে উপদেষ্টাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, পুলিশ ক্যাম্পটি স্থাপনের পর অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধসহ অনেক পরিবার আবার নিজ গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে। উপদেষ্টা তাদের নিরাপত্তাসহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলার দুই বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিগত বছরটি এর আগের বছরের চেয়ে খুন এবং ডাকাতি কমেছে। দুর্গম এবং সংহিতাপ্রবণ এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ি বা ক্যাম্প স্থাপনে এর পরিমান আরও কমানো যাবে বলেও মত পোষণ করেন উপদেষ্টা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন গিয়ে স্থানীয় নৌডাকাত ও অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্রের বাঁধার কারণেই এটি দ্রুত স্থায়ী ফাঁড়িতে রুপান্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পেশ করেছে। গত ২২ আগস্ট গুয়াগাছিয়া অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হয়। এরপর এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন, এলাকায় ও ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন এবং ক্যাম্পের টহল পুলিশ ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে আসে গুয়াগাছিয়া।
ইএ/টিকে