মস্কোতে শান্তি আলোচনায় বসতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন ইউক্রেনেরে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যতদিন যুদ্ধ চলবে, ততদিন মস্কোতে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় প্রকাশিত বিদেশি একটি গণমাধ্যমের সাথে এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, ‘তিনি কিয়েভে আসতে পারেন। আমার দেশ যখন প্রতিদিন ক্ষেপণাস্ত্রের কবলে পড়ে, আক্রমণের মুখে পড়ে, তখন আমি মস্কো যেতে পারি না। আমি এই সন্ত্রাসীর রাজধানীতে যেতে পারি না।’
মস্কো যেতে অস্বীকৃতি জানালেও পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে সম্মত বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় নেতা। বলেন, যেকোনো ফরম্যাটে রাশিয়ান প্রেসিডেন্টর সাথে দেখা করতে প্রস্তুত।
যত দিন গড়াচ্ছে ততই জটিল হচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের সমীকরণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আলাদা বৈঠকের পরেও আসেনি কোনো উল্লেখযোগ্য সমাধান। তবে বৈঠকের পর ট্রাম্প বারবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইউক্রেন-রাশিয়ার সরাসরি বৈঠকের আশ্বাস দিয়েছেন।
গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) চীনের তিয়েনানমেন স্কোয়ারে বিজয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দেয়ার পর পুতিন বলেন, বৈঠকের জন্য যেকোনো সময় মস্কোয় আসতে পারেন জেলেনস্কি। তবে তার নিজের জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসার কোনো অভিপ্রায় নেই বলেও জানিয়েছেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি জেলেনস্কির সঙ্গে এমন বৈঠকের সম্ভাবনা কখনও নাকচ করিনি। কিন্তু ওই বৈঠকে বসার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে?’
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের যেকোনো বৈঠকের ভালো ফলাফলের জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। যদি বৈঠকের বিষয়ে সব প্রস্তুতি হয়ে গিয়ে থাকে, তবে আমিও বৈঠকের জন্য প্রস্তুত। জেলেনস্কি যেকোনো সময় মস্কোয় আসতে পারেন।
এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানে নিজের ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও পুতিনকে রাজি করানো যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। এটিকে বলেছেন তার সময়কার সবচেয়ে কঠিন সংঘাত। ট্রাম্পের দাবি, অন্য বৈশ্বিক সংকট তিনি সমাধান করতে পেরেছেন, কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ আলাদা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বিভাগ দাবি করেছে, পোকরোভস্ক এলাকায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া কৌশল বদলেছে। বড় আকারের হামলা না চালিয়ে ছোট ছোট দলে শহরের ভেতর অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে তারা। প্রধান লক্ষ্য ইউক্রেনের ড্রোন ও মর্টার অবস্থানের কাছাকাছি পৌঁছে প্রতিরক্ষা ভাঙা এবং নতুন করে গ্রে জোন সম্প্রসারণ করা।
ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় সাত লাখ রুশ সেনা ইউক্রেনে অবস্থান করছে, যার বড় অংশ দোনেৎস্কে মোতায়েন। এই শক্তিবৃদ্ধিতে উত্তর কোরীয় সেনার যোগানও গুরুত্ব পাচ্ছে বলে দাবি তাদের। শুধু সেনাই নয়, পিয়ংইয়ং গোলাবারুদ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও দিচ্ছে বলে দাবি কিয়েভের। ইউক্রেনীয় সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে রুশ বাহিনীর ৪০-৬০ শতাংশ গোলাবারুদ উত্তর কোরিয়ায় তৈরি।
ইএ/টিকে