ডাকসু নির্বাচন: শপথ নিলেন ছাত্রদল প্যানেলের প্রার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে শপথবাক্য পাঠ করেছেন ছাত্রদল প্যানেলের প্রার্থীরা। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন সংলগ্ন ঐতিহাসিক বটতলায় শপথবাক্য পাঠ করেন তারা। লিখিত শপথবাক্য পাঠ করান ছাত্রদল সমর্থিত ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান।

লিখিত এই শপথবাক্য হুবুহু তুলে ধরা হলো

আজ আমরা শত বছরের ঐতিহ্যবাহী, দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং গণমানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার ধারক ও বাহক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পবিত্র মাটি, ঐতিহাসিক বটতলায়, আপনাদের সকলের সামনে দাঁড়িয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী হিসেবে-(১) আমরা শপথ করছি যে, প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য একটি আনন্দময়, বসবাসযোগ্য এবং নিরাপদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলের ঘৃণিত গণরুম প্রথা, গেস্টরুম নির্যাতন, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য বাধ্য করানো এবং ভিন্নমতের জন্য অত্যাচার ও নিপীড়ন চালানোর যে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যেকোন মূল্যে আমাদের ক্যাম্পাসে তা আর কখনো ফিরে আসতে দিবো না।

(২) আমরা শপথ করছি যে, যেভাবে আমরা বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনামলের চূড়ান্ত লড়াইয়ে ২০২৪ এর জুলাইয়ের রক্ত ঝরা দিনগুলোতে বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, যেভাবে আমাদের অগ্রজেরা ১৯৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে তাঁরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যেভাবে আমাদের পূর্বসূরিরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও সাতচল্লিশের দেশভাগের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন- ঠিক একইভাবে ভবিষ্যতে যদি দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কিংবা জনগণের মুক্তির পথ আবারও কোনো কালো শক্তির দ্বারা অবরুদ্ধ হয়, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সেই অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।

(৩) আমরা শপথ করছি যে, আমাদের বোনদের তথা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক এবং সুরক্ষিত এলাকায় পরিণত করবো, যেখানে তাদের জন্য নিরাপদ আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি তাঁদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে।

(৪) আমরা শপথ করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর জন্য হলগুলোতে প্রশাসনের মাধ্যমে বৈধ সিটের ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সহজ-সুবিধাজনক পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।

(৫) আমরা শপথ করছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সুরক্ষা প্রদানের জন্য আমরা সাইবার বুলিং, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশন ও ফেইক নিউজসহ অনলাইনভিত্তিক সকল ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।

(৬) আমরা শপথ করছি যে, আমাদের প্রাণের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আমরা শিক্ষা, গবেষণা ও পড়াশোনার পরিবেশের মানোন্নয়ন, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সম্প্রসারণ, এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনমূলক কার্যক্রমসমূহ গতিশীল করতে নিজেদের সর্বোচ্চ নিয়জিত রাখবো।

(৭) আমরা শপথ করছি যে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ডাকসুর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলে, আমরা ডাকসুর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে শিষ্টাচার, সৌজন্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখবো, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে সম্পর্ক ও আচরণে সর্বদা সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন ঘটাবো।

(৮) আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে বলতে চাই যে, আমাদের প্যানেলের প্রতিটি প্রার্থী এই শপথের প্রতিটি শব্দ অক্ষরে-অক্ষরে মনে প্রাণে ধারণ করি, এবং আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে প্রত্যেকের জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ কর্মকান্ডের মাধ্যমে আপনাদের সামনে এই প্রতিটি শপথ বাস্তবায়িত হবে, ইনশাআল্লাহ।

এরপর আবিদুল ইসলাম খান আলাদাভাবে বলেন, ‘আমরা আশা করবো একটি সফল ডাকসুর প্রত্যাশা থেকে, একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যয় থেকে, আপনারাও আমাদের এই শপথের অংশীদার হবেন, এবং আমাদের প্যানেলের প্রতিটি প্রার্থীকে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।

আসুন, আমরা সবাই নিজ-নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ও প্যানেলকে ভোট দেই। আমরা সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খাকে ধারণ করে, গড়ে তুলি একটি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও শিক্ষার্থীবান্ধব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বেআইনি সমাবেশ ও ঝটিকা মিছিল দমনে কঠোর অবস্থানে সরকার Sep 07, 2025
img
পাবনায় আওয়ামী লীগের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাকীবিল্লাহ গ্রেপ্তার Sep 07, 2025
img
বিড়ালের সাথে তারেক রহমানের খুনসুটির ছবি পোস্ট, উচ্ছ্বসিত শুভাকাঙ্ক্ষীরা Sep 07, 2025
img
তিনদফা দাবিতে জুলাই ঐক্যের কর্মসূচি Sep 07, 2025
img
ইন্দোনেশিয়ায় ভবনধসে প্রাণ গেল অন্তত ৩ জনের Sep 07, 2025
img
পাকিস্তানকে প্রবল বন্যার সতর্কতা দিলো ভারত Sep 07, 2025
img
সালমান খানকে গুন্ডা, অসভ্য, খারাপ মানুষ আখ্যা দিলেন ‘দাবাং’ পরিচালক Sep 07, 2025
img
বদরুদ্দীন উমর ছিলেন জাতির শাণিত বিবেক : রিজভী Sep 07, 2025
img
মৌলিক সংস্কার ছাড়া মানুষের মুক্তি আসবে না : প্রিন্স Sep 07, 2025
"ঘৃণা করতেন রাজনীতি, আজ লাল প্রোফাইলে নেতা!" Sep 07, 2025
img
ব্যাংকিং সমস্যার কারণে ৪০০ পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ Sep 07, 2025
img
সমালোচকদের পাল্টা জবাব দিলেন আতিফ আসলাম Sep 07, 2025
img
দেশে সোনার দাম ছাড়াল ১ লাখ ৮১ হাজার Sep 07, 2025
img
স্বার্থ সংরক্ষণে দক্ষ বাণিজ্য আলোচক তৈরি অত্যন্ত জরুরি : বাণিজ্য উপদেষ্টা Sep 07, 2025
img
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর হবে : শিল্প উপদেষ্টা Sep 07, 2025
img
‘লেডি করণ জোহর’ বলে নুসরাতকে কটাক্ষ করল নেটিজেনরা Sep 07, 2025
img
চিরচেনা রূপ ভেঙে নতুন সাজে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি Sep 07, 2025
img
এনসিএল দিয়েও ফিরতে পারছেন না বর্ষণ! Sep 07, 2025
img
বর্তমান সরকারের জন্য কী পরিণতি অপেক্ষা করছে? প্রশ্ন রনির Sep 07, 2025
img
আ.লীগের বিচার বিএনপি যতটা চায়, ততটা আর কোনো দল চায় না: রুমিন ফারহানা Sep 07, 2025