অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গিয়ে তিনি রাজনীতিবিদদের অভাব স্পষ্টভাবে অনুভব করছেন। তার মতে, অর্থনীতি ও সংস্কারের মূল চালিকাশক্তি হলো রাজনীতি, আর রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া ভালো কোনো উদ্যোগ স্থায়ী হতে পারে না।
রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) মিলনায়তনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের লেখা ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, অর্থনীতির মূল রাজনীতি।
রাজনীতি সবকিছুর নির্যাস। সংস্কার বলি আর যা-ই বলি, টেকসই হতে হলে রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সমর্থন অপরিহার্য।
রাজনীতির প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, রাজনীতি মানে শুধু বক্তৃতা বা সভা-সমাবেশ নয়। দেশের প্রতি দরদ, দেশের প্রতি মমতা সেটাই আসল রাজনীতি।
দেশপ্রেমিক মানসিকতা ছাড়া কোনো সংস্কার সফল হবে না।
তিনি জানান, কিছু ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বন্ধুদের কাছে সংস্কারের ধারাবাহিকতা নিয়ে জানতে চাইলে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভালো কাজ হলে অবশ্যই চালিয়ে যাবেন। তবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন অর্থ উপদেষ্টা। তার ভাষায়, প্রতিদিন প্রচুর গালিগালাজ শুনি।
অনেকে বলে আমরা ভুল পথে গেছি। কিন্তু আমরা চার বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করেছি, বিদেশি সহায়তাও আসছে। তাই একেবারেই কিছু হচ্ছে না তা নয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বর্তমান সরকার আসলেই সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি আনতে পেরেছে কি না, না কি আরো অগোছালো করে ফেলেছে।
জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংস্কার কোনো দেড় বছরে শেষ করার বিষয় নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তবে টেকসই করতে হলে রাজনৈতিক ঐকমত্য অত্যন্ত জরুরি। আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে।
তিনি জানান, কাঠামোগত সংস্কারের পথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনের মতো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি সমালোচনার প্রবণতা নিয়েও আক্ষেপ করেন। আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ছোট ছোট বিষয়ে আটকে যাই, অথচ বড় ছবিটা আড়ালে চলে যায়, বলেন তিনি।
প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের কাজের মধ্যে রাজনৈতিক অর্থনীতির বীভৎস চিত্র সবসময়ই চোখে পড়ে। যেমন—খাল-নদী দখলমুক্ত করার পর আবারও বড় শিল্পগ্রুপগুলো কৃষি কাজে ব্যবহার করতে আবেদন করে। এতে বোঝা যায়, সংস্কার কতটা ভঙ্গুর।
অনুষ্ঠানে বইয়ের লেখক ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির জানান, তার বইটিতে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সম্পাদকীয় নিবন্ধ সংকলিত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ, উন্নয়ন ও অর্থনীতির নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টাদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, সংস্কার কার্যক্রম কেবল নীতিগত পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, ঐকমত্য এবং ধারাবাহিকতা ছাড়া কোনো সংস্কারই স্থায়ীভাবে টিকবে না। আর রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রভাবকে মোকাবিলা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
পিএ/টিএ