ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। ফিলিস্তিনিরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও যারপরনাই ক্ষেপেছে ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছুক দেশগুলোর কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন দেশ দুটির নেতারা।
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেনসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মাসে ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেই এই স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। যা কোনোভাবেই মানতে পারছে না ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র।
মিত্র দেশগুলোর মিত্র এই সিদ্ধান্তে বেজায় চটেছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ তার মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যরা। গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সা’আর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে ‘মারাত্মক ভুল’ বলে আখ্যা দেন।
সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দেন, এ ধরনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে ‘পাল্টা, একপাক্ষিক’ পদক্ষেপ নেবে ইসরাইল। যদিও কী পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া হবে তা স্পষ্ট করেননি তিনি। অধিকৃত পশ্চিম তীর দখলে নেয়া হতে পারে, যা পরিকল্পনার খবর এরই মধ্যে সামনে এসেছে।
ডেনমার্ক সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেনের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে অংশ নিয়ে গিডিয়ন সা’আর আরও বলেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো রাষ্ট্রগুলো তথাকথিক যে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বিপজ্জনক ভুল।
তার মতে, এ ধরনের স্বীকৃতি ‘এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে’ এবং ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা আরও কঠিন হয়ে পড়বে’। ‘এতে ইসরাইল একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়া বিপর্যয় ডেকে আনবে।’ রোববার এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘অসলো চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনোই গঠিত হয়নি। এভাবে একপাক্ষিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে ওই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রচেষ্টা কেবল আরও সমস্যার সৃষ্টি করবে এবং যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টাকে বিপদের মুখে ফেলবে।’
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর কুইটোতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সব দেশকে স্পষ্ট করে বলেছি- এই স্বীকৃতির ব্যাপারটা ভুয়া, এটা বাস্তব নয়। যদি এটা করা হয়, তাহলে আরও সমস্যা তৈরি হবে।’
জুলাই মাসে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক দেশ ছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব। সে সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন, ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে তার দেশ।
এরপর ব্রিটেন জানায়, ইসরাইল যদি অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি চালু না করে, তাহলে তারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। এরপর বেলজিয়াম, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও ফ্রান্সের উদ্যোগের সঙ্গে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। এমতাবস্থায় ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি আটকাতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন সামনে রেখে গত ৩০ আগস্ট ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও আরও ৮০ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় বলা হয়, মাহমুদ আব্বাস ও আরও ৮০ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ভিসা খারিজ করা হয়েছে।
ইএ/টিকে