রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া এখন বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রে। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এটিকে চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। কিন্তু সনদ ঘিরে যতটা আশাবাদ তৈরি হয়েছে ততটাই তৈরি হচ্ছে প্রশ্ন আর সন্দেহ। এই সনদ কি সত্যিই ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি হবে? নাকি আবারও অতীতের মতো ভঙ্গুর এক ঐক্যমতের দলিলে থেমে যাবে।’
সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিওতে তিনি এসব কথা বলেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিতর্ক বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে। ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান ইতিমধ্যেই অচল অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কমিশন তাই আপাতত বাস্তবায়নের বিষয়টি খসড়ার বাইরে রেখে আলাদা সুপারিশ আকারে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছে।
এক কথায় বলা যায় সনদ থাকছে একপাশে আর বাস্তবায়নের প্রশ্ন থাকছে অন্য পাশে। ফলে প্রশ্ন থেকেই যায় বাস্তবায়ন ছাড়া কি কোনো দলিল কার্যকর হয়?’
তিনি বলেন, ‘আজকের জুলাই সনদ অনেকের কাছে নতুন আসার প্রতীক। কিন্তু খসড়ায় যখন দেখা যাচ্ছে আদালতের ভূমিকা খর্ব করার চেষ্টা আছে- যেমন বলা হচ্ছে সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। তখন আশার সঙ্গে সঙ্গে সংঘাতও তৈরি হচ্ছে।
কারণ বিচার বিভাগের বাইরে কোনো দলিলকে দাঁড় করানো মানেই স্বৈরাচারী প্রবণতার দিকে ধাবিত হওয়া। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যেই ক্ষমতায় গেছে সেই সংবিধানকে নিজের সুবিধা মতো ব্যবহার করেছে। এই সনদও যদি একই পথে হাঁটে তবে তার কোনো আলাদা মর্যাদা তৈরি হবে না।’
জিল্লুর আরো বলেন, ‘এখানে নারী প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নটিও অগ্রাহ্য করা যাবে না। দেশের অর্ধেক ভোটার নারী অথচ পুরো আলোচনায় তাদের অংশগ্রহণ ছিল প্রায় শূন্য।
হাতে গোনা কয়েকজন নারী রাজনীতিককে ডাকা হলেও তারা আলোচনায় কতটা প্রভাব ফেলেছেন তা বিতর্কিত। অথচ এই সনদ একদিন সংবিধানের অংশ হবে। নারীদের বাদ দিয়ে তৈরি দলিল ভবিষ্যতে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে সেটাই বড় প্রশ্ন। গণতন্ত্র মানে কেবল ভোট নয়, প্রতিনিধিত্ব। নারী ভোটারদের অবহেলা করা মানে গণতন্ত্রের আত্মাকেই অস্বীকার করা।’
ইএ/টিকে