রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তাহীনতার অদ্ভুত এক দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে। এমন এক সময় যখন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে মানুষ জীবন বাঁচাতে চাইছে, ঠিক সেই সময় পুলিশ নিজেরাই ভয় পাচ্ছে ঘটনাস্থলে যেতে। আদাবরের ঘটনাটা বেশ প্রতীকী। রাত সাড়ে ১০টার দিকে শ্যামলী হাউজিংয়ে এক যুবককে আটকে রাখার খবর পেয়ে চার সদস্যের একটি দল ছুটে গেল।
আর সেখানে আট থেকে দশজনের মব হামলা। কনস্টেবল আলামিন দায়ের গোপে জখম, পুলিশ ভ্যান ভাঙচুর।
গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে শ্যামলী হাউজিং এলাকায় একটি অপহরণের ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছালে অপহরণকারীরা পুলিশ ও সংবাদদাতাদের ওপর অতর্কিতভাবে দেশীয় ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলের এক ভিডিওতে তিনি এ প্রসঙ্গে কথা বলেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, একটি ঘটনার অভিঘাত পুরো বাহিনীর বুকে ঢুকে গেছে। ডিএমপির কর্মকর্তারা এখন খোলামেলা বলছেন, আমাদের ভেতরে ভয় ঢুকে গেছে। জরুরি কল মানেই যে ঝুঁকির আধার সেই বোধ তাদেরকে আটকে দিচ্ছে। কখনো ঘটনাস্থলে যেতে দেরি, কখনো আবার একেবারেই না যাওয়া।
নরসিংদীর শিবপুর বা গাইবান্ধার উদাহরণগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় সেবা আর নাগরিকের আস্থা দুটোই খসে পড়ছে।
তিনি বলেন, এই ভয়টা কোথা থেকে এলো? কেবল মবের হাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নয়। এর পেছনে আছে বছরের পর বছর জমে থাকা অভিশাপ। বিগত শাসনামলে নিরস্ত্র ছাত্রজনতার ওপর হামলা। সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা।
আইনকে ব্যবহার করে ভয় দেখানো এসবের সম্মুখ ভাগে থাকতে হয়েছে পুলিশকে। গণঅভ্যুত্থানের পর সমীকরণ পাল্টেছে।
জিল্লুর আরো বলেন, মানুষের মনে যে ক্ষোভটা জেগেছিল তা রাতারাতি ধুয়ে যায় না। অনেক থানায় জনতা সরাসরি গিয়ে চাপ তৈরি করেছে। অনেক জায়গায় পুলিশ কর্মকর্তারা টার্গেটেড আক্রমণের ভয়ে মাঠ পর্যায়কে লো প্রোফাইল করে রেখেছেন। ফলে ট্রিপল নাইনের যে ভরসায় একসময় মানুষ বলতো ফোন দিলেই সাহায্য, আজ সেখানে জেগে উঠেছে সংশয়ের ছায়া।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ থেকে ২০২৪-এর এপ্রিল পর্যন্ত ৬ কোটির বেশি কল এসেছে। সেই সংখ্যার আড়ালে যে অভিজ্ঞতা— কখনো সাহায্য আসছে না, কখনো ফোনে মিমাংসা করতে বলছে কেউ, আবার কোথাও টাকা লাগবে। এসব গল্প সোশ্যাল মিডিয়া থেকে লোকমুখে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
এসএন